Tuesday, November 28, 2017

রেড লেডী এফ -১ হাইব্রিড পেঁপে চাষ





Red Lady Papaya: 


রেড লেডী এফ -১ হাইব্রিড পেঁপে বিস্তারিত


  
এটি তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে। রেডলেডি জাতের প্রত্যেক টি গাছে পেঁপে ধরে এই জাতের পেঁপে গুলি বেশ বড়। ফলের রং লাল-সবুজ। এক একটি ফলের ওজন ১..৫ থেকে ২ কেজি। মাংস বেশ পুরুগাঢ় লালস্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেঃ মিঃ হয় তখন ফল ধরা শুরু হয় প্রতিটি গাছ ৪০ টির অধিক ফল ধারন করে। কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়। পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না বলেইদূর দুরান্তে বাজারজাত করা যায়। এই জাতের পেঁপে রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতা আছে।

অঙ্কুরিত হার ৭৫%-৯৫% বীজের পরিমান ২ গ্রাম ( ১২০-১৪০ টি )
প্রতিটি গাছে ফলন ৫০-১২০ পর্যন্ত  ফল ধারন করে। 
ফলের আকার এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজি। 

বীজের হার:
প্রতি গ্রামে বীজের সংখ্যা ৬০-৭০টি।  - গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয় ৫০০ গাছের জন্য 

চারা তৈরিঃ
বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের প্যাকেট কেটে  ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা জায়গায় রেখে ঠান্ডা করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভেজানোর পর পলেথিন ব্যাগে চারা তৈরি করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫X৬ সেঃ মিঃ আকারে ব্যাগে সম পরিমাণ বেলে দোয়াশ মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করেব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে একটি এবং পুরাতন বীজ হলে ২টি বীজ বপন করতে হবে। ১টি ব্যাগে এক এর অধিক চারা রাখা উচিৎ নয়।

রেডলেডি হাইব্রিড পেঁপে জাতের বৈশিষ্ট্যঃ
এটি তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে।
রেডলেডি জাতের প্রত্যেক টি গাছে পেঁপে ধরে ।

রেডলেডি জাতের পেঁপে গাছ সর্বচো ১০ ফিট হয়।
গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেঃ মিঃ হয় তখন ফল ধরা শুরু হয়।
প্রতিটি গাছে ৫০-১২০ পর্যন্ত ফল ধারন করে।

৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্য।
এই জাতের পেঁপে গুলি বেশ বড়।
ফলের রং লাল-সবুজ।

এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজি।
মাংস বেশ পুরুগাঢ় লালস্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত।
কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়।
পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না বলেইদূর দুরান্তে বাজারজাত করা যায়।
এই জাতের পেঁপে রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতা আছে।
এই জাতের জীবন কাল ২ বছর অধিক।

সার প্রয়োগের মাত্রাঃ 




সার
প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার
এই সার বাড়িতেই তৈরি করা সম্ভব। 
বিকল্প হিসেবে (প্রতি গাছে)
টিএসপি=৬৫ গ্রাম
ইউরিয়া=৬৫ গ্রাম
এমপি=৬৫ গ্রাম
জিপসাম=৩৪ গ্রাম
বোরাক্স=৪ গ্রাম
জিংক সালফেট=২.৪ গ্রাম



চারা রোপণ পদ্ধতিঃ

 ১. দেড় থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।

২. ২ মিটার দূরে দূরে ৬০ X ৬০ X ৬০ সে.মি. আকারের গর্ত করতে হয়।

৩. চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়।

৪. পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি. নালা রাখলে ভালো।


রেডলেডি উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে জাতটি বাংলাদেরশের আবহওয়াতে চাষ উপযোগী। বাংলাদেশের অনেক স্থানে এর চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে ফলন খুবই ভাল হচ্ছে। বান্দরবানের মাটি ও আবহাওয়া রেডলেডি পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী। 


  

















Monday, November 27, 2017

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ চাষ



ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ বেগুন পরিবারের ফসল।



বাংলাদেশে এর ব্যবহার কম হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এর উৎপত্তি স্থল হলো দক্ষিণ আমেরিকার নিরক্ষীয় অঞ্চল। ধারণা করা হয়ে থাকে ব্রাজিল মিষ্টি মরিচের উৎপত্তিস্থান। বিশ্বে আবাদকৃত সব মরিচই একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত যার মধ্যে ১১টি গ্রুপ রয়েছে এবং ঝালবিহীন ও ঝাল মরিচ হিসেবে বিভক্ত করা হয়েছে। মিষ্টি মরিচের ফলের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, তবে সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়।




মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও অতি সম্প্রতি এর চাষ এ দেশে প্রসারিত হচ্ছে বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশপাশে সীমিত পরিসরে কৃষকরা এর চাষ করে থাকে, যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন সুপার মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। মিষ্টি মরিচের রপ্তানি সম্ভাবনাও প্রচুর। বিশ্বে অনেক দেশেই মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বে টমেটোর পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ। এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে যেমন পাতা সালাদ অথবা স্যুপ তৈরিতে ব্যবহার হয়, কাঁচা ফল সালাত এবং রান্না করে সবজি হিসেবে অতি সুস্বাদু খাদ্য। পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এবং টবে চাষের উপযোগী বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

ক্যাপসিকামের উপকারিতাঃ

১।  ক্যান্সার প্রতিরোধ করঃ   ক্যাপসিকামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে সহায়ক। ক্যাপসিকামে রয়েছে সালফার কম্পাউন্ড যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার এবং এসোফেগাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।

২।  দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর করেঃ   ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং বেটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

৩।  ওজন কমায়ঃ  ক্যাপসিকামের অ্যাক্টিভেটিং থার্মোজেনেসিস এবং হজম শক্তি উন্নত করার ক্ষমতা দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক।

৪।  কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা দূর করেঃ  ক্যাপসিকামে রয়েছে লাইকোপেন না কার্ডিওভ্যস্কুলার নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষভাবে সহায়ক ক্যাপসিকাম।

৫।  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ  ক্যাপসিকামের ভিটামিন সি এবং কে দেহের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে। এতে করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় অনেকাংশে, যার ফলে ছোটোখাটো নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।

৬।  দেহে আয়রনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা কমায়ঃ   ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি দেহে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। এতে দেহে আয়রনের অভাব জনিত সমস্যা দূর হয়।

৭।  উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমায়ঃ  ক্যাপসিকামের ক্যাপসাইসিন উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।

৮।  হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করেঃ   পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ক্যাপসিকামের জুস হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা ও পেটের পীড়া জনিত রোগ যেমন গ্যাস হওয়া, ডায়রিয়া, ডিসপেপসিয়া ইত্যাদি দূর করতে সহায়তা করে।


৯। ত্বক পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ উপকারী, এটি ত্বকের র‍্যাশ হওয়া ও ব্রণ প্রতিরোধ করে।

১০। এর ভিটামিন-সি মস্তিষ্কের টিস্যুকে পুনরুজ্জীবিত করে; দেহের হাড়কে সুগঠিত করে। 

১১।  ক্যাপসিকাম যেকোনো ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে কাজ করে।



 নিচে দেওয়া হলো চাষাবাদ ও উৎপাদন কলাকৌশলঃ 

জলবায়ু ও মাটিঃ
ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬০-২৫০সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৬০- ২১০সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে, ফলন ও মান কমে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না। অক্টোবর মাসে বীজ বপন করে নভেম্বরে চারা রোপণ করলে দেখা যায় যে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ জন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনি, পলি হাউস, পলিভিনাইল হাউসে গাছ লাগালে রাতে ভিতরের তাপমাত্রা বাইরে অপেক্ষা বেশি থাকে। উন্নত বিশ্বে যেমন- জাপান, আমেরিকা, বৃটেন, নেদারল্যান্ড, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশে গ্রিন হাউস গ্লাস হাউস, পলি হাউস ইত্যাদির মাধ্যমে তাপমাত্রা ও আলো নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী লাভজনকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করছে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একই পদ্ধতি গ্রহণ করে প্রচুর ক্যাপসিকামের চাষ হচ্ছে। ফুল এবং ফল ধারণ দিবস দৈর্ঘ্য দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কিন্তু আলোক তীব্রতা এবং আর্দ্রতা ফল ধারণে প্রভাব ফেলে। সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য উত্তম। মিষ্টি মরিচ খরা এবং জলাবদ্ধতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। মিষ্টি মরিচের জন্য মাটির অম্ল ক্ষারত্ব ৫.৫-৭.০ এর মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়।




জাত- আমাদের দেশে আবাদকৃত জাতগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে
California Wonder, Tender Bell (F1)এবং Yellow Wonder ইত্যাদি । প্রতি বছর এগুলোর বীজ আমদানি করতে হয়। তবে আমাদের দেশে California Wonder এর বীজ উৎপাদন করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
জীবন কাল: জাত ও মৌসুমভেদে মিষ্টি মরিচের জীবনকাল ১২০ থেকে ১৪০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বীজ বপনের সময়: অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস।
বীজের মাত্রা: প্রতি হেক্টরে ৩০ হাজার চারার জন্য প্রায় ২৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয় ।

চারা উৎপাদনঃ
প্রথমে বীজগুলো ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সুনিষ্কাশিত উঁচু বীজতলায় মাটি মিহি করে ১০x২ সে.মি. দূরে দূরে বীজ বপন করে হালকাভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজতলায় প্রয়োজনানুসারে ঝাঝরি দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে। বীজ গজাতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। বীজ বপনের ৭-১০দিন পর চারা ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হলে ৯-১২ সে.মি. আকারের পলি ব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। পটিং মিডিয়াতে ৩:১:১ অনুপাতে যথাক্রমে মাটি, কম্পোস্ট এবং বালি মিশাতে হবে। পরে পলিব্যাগ ছায়াযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে, যাতে প্রখর সূর্যালোকে এবং ঝড় বৃষ্টি আঘাত হানতে না পারে। উল্লেখ্য যে, অক্টোবর মাস হচ্ছে বীজ বপনের উত্তম সময়।

জমি তৈরি, সার প্রয়োগ ও চারা রোপণঃ
ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে যাতে জমিতে বড় বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে। মিষ্টি মরিচ চাষে প্রতি শতাংশে গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৪ কেজি, এমপি ১ কেজি, জিপসাম ৪৫০ গ্রাম এবং জিংক অক্সাইড ২০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর, টিএসপি, জিংক অক্সাইড, জিপসাম, ১/৩ ভাগ এমপি এবং ১/৩ ভাগ ইউরিয়া চারা রোপণের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ২/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমপি পরবর্তীতে দুই ভাগ করে চারা লাগানোর যথাক্রমে ২৫ এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। চারার রোপণ দূরত্ব জাতভেদে ভিন্নতর হয়। সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা ৪৫x৪৫ সে. মি. দূরত্বে রোপণ করা হয়। মাঠে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বেড প্রস্থে ৭৫ সে. মি. হতে হবে এবং লম্বায় দুটি সারিতে ২০টি চারা সংকোলনের জন্য ৯ মিটার বেড হবে। দুটি সারির মাঝখানে ৩০ সে. মি. ড্রেন করতে হবে। চারা পড়ন্ত বিকেলে রোপণ করা উত্তম । চারা রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। প্রতিদিন মাঠ পরিদর্শন করতে হবে। যদি কোনো চারা মারা যায় তাহলে ওই জায়গায় পুনরায় চারা রোপণ করতে হবে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় এ সময় গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । কাজেই গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনিতে গাছ লাগালে রাতে ভেতরের তাপমাত্রা বাইর অপেক্ষা বেশি থাকে এবং গাছের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়।





অন্যান্য পরিচর্যাঃ
মিষ্টি মরিচ খরা ও জলাবদ্ধাতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। জমিতে প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে। আবার অতিরিক্ত সেচ দিলে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো কোনো জাতে ফল ধরা অবস্থায় খুঁটি দিতে হয় যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে। আগাছানাশক বা হাত দিয়ে অথবা নিড়ানি দিয়ে প্রয়োজনীয় আগাছা দমন করতে হবে।

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাঃ 
জাবপোকা (এফিড) কারনে ক্ষতির লক্ষণ : প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়। জাবপোকার শরীরের পেছন দিকে অবস্থিত দুটি নল দিয়ে মধুর মতো এক প্রকার রস নিসরণ করে। এই রস পাতা ও কান্ডে আটকে গেলে তাতে সুঁটিমোল্ড নামক এক প্রকার কালো রঙের ছত্রাক জন্মায় এবং তার ফলে গাছের সবুজ অংশ ঢেকে যায় এবং সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় এর বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এর সংখ্যা কমে যায়।

দমন ব্যবস্থা ১ঃ 
প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ (১ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবান গোলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুঁড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়। লেডি বার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ ও কীড়া এবং সিরফিড্ ফ্লাই এর কীড়া জাবপোকা খেয়ে প্রাকৃতিকভাবে দমন করে। সুতরাং উপরোক্ত বন্ধু পোকা সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে শুধু আক্রান্ত স্থানসমূহে কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি বিষক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক, যেমন- ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. হারে অথবা পিরিমর ৫০ ডিপি প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। মৌমাছি বা পরাগায়নে সাহায্যকারী পোকাদের জন্য অনেকটা নিরাপদ। বিষ প্রয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার জন্য কোনো ফল সংগ্রহ করা যাবে না।

থ্রিপস পোকায় ক্ষতির লক্ষণ : পূর্ণাঙ্গ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক থ্রিপস পাতা থেকে রস চুষে খায়। পাতার মধ্যশিরার নিকটবর্তী এলাকা বাদামি রঙ ধারণ করে ও শুকিয়ে যায়। নৌকার খোলের পাতা ওপরের দিকে কুঁকড়িয়ে যায়। গাঢ় বাদামি রঙের পূর্ণাঙ্গ থ্রিপস পোকা খুবই ছোট, সরু ও লম্বাকৃতির। খালি চোখে কোনোমতে এদের দেখা যায়।

দমন ব্যবস্থা ২ঃ 
পাঁচ গ্রাম পরিমাণ গুঁড়া সাবান প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। ক্ষেতে সাদা রঙের ৩০ সে.মি. - ৩০ সে.মি. আকারের বোর্ডে পাতলা করে গ্রিজ বা আঠা লাগিয়ে কাঠির সাহায্যে ৩ মিটার দূরে দূরে আঠা ফাঁদ পেতে থ্রিপস পোকা আকৃষ্ট করে মারা। এক কেজি আধা ভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করা। আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. পরিমাণ) স্প্রে করা।
লালমাকড় (মাইট)- এর কারনে ক্ষতির লক্ষণ : লালমাকড় খাওয়া পাতায় হলুদাভ ছোপ ছোপ দাগের সৃষ্টি হয়। যখন এই ধরনের আক্রমণ পাতার নিচে দিকে মাঝখানে বেশি হয় তখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই পাতা কুঁকড়িয়ে যেতে দেখা যায়। ব্যাপক আক্রমণের ফলে সম্পূর্ণ পাতা হলুদ ও বাদামি রঙ ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত পাতা ঝরে পড়ে। লালমাকড় পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিম পাড়ে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এই ডিম থেকে কমলা রঙের বাচ্চা বের হয়ে বেগুন পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশ খেতে থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চাগুলো গাঢ়-কমলা বা লাল রঙের পূর্ণ মাকড়ে পরিণত হয় যারা দেখতে ক্ষুদ্র মাকড়সার মতো। এদের পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশে চলাফেরা করতে দেখা যায়।


দমন ব্যবস্থা ৩ঃ
 
নিমতেল ৫ মি. লি. + ৫ গ্রাম ট্রিকস্ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। এক কেজি আধাভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি হলে নিউরন ৫০০ ইসি অথবা টর্ক ৫৫০ এস সি ২ মি.লি. হারে প্রতি লিটার পানির সাথে স্প্রে করা যেতে পারে। মাকড়নাশক ওমাইট বা টলস্টার (প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. পরিমাণ) স্প্রে করা।

রোগবালাইঃ 
এ্যানথ্রাকনোজের রোগের লক্ষণঃ 
পাতায় বসানো দাগ হয়। ফলেও এ দাগ দেখা যায়। পাতা ঝরে পড়ে এবং ফল পচে যায়। পাতায় গোলাকৃতি দাগ দেখা যায়। কুয়াশায় পাতার পচন লক্ষ করা যায়। প্রথমে মধ্যাংশ একটু উঁচু ছোট কালো দাগ হয়। দাগ বাড়তে থাকে এবং পুরো ফলে কালো ছোপ ছোপ দাগ হয়ে ফল পচে যায়। উক্ত ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করলে পরের বছর চারা গজায় না। দমন ব্যবস্থা : ব্যাভিষ্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করা। রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে। ফল পুরোপুরি না পাকিয়ে তুলে নিতে হবে। ক্যাপসিকামের বীজ-ফলে অবশ্যই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে বীজ রোগমুক্ত রাখতে হবে।

ব্লাইট রোগের লক্ষণ: পাতায় দাগ হয়। পাতা ঝলসে যায়।
দমন ব্যবস্থা ৪ঃ  
ব্যাভিষ্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করা। রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে।


উইল্টিং রোগের লক্ষণ : গাছ আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে এবং মারা যায়। 
দমন ব্যবস্থা ৫ঃ 
আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলা এবং জমিতে প্লাবন সেচ না দেয়া। 

ফসল তোলা ও ফলনঃ মিষ্টি মরিচ সাধারণত পরিপক্ব সবুজ অবস্থায় লালচে হওয়ার আগেই মাঠ থেকে উঠানো হয়। সাধারণত সপ্তাহে একবার গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। ফল সংগ্রহের পর ঠান্ডা অথচ ছায়াযুক্ত স্থানে বাজারজাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, ফসল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলে সামান্য পরিমাণে বোটা রেখে দিতে হবে। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পলি হাউজের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে সাফল্যজনকভাবে ক্যাপসিকাম উৎপাদন করেছেন। উওম ব্যবস্থা পনার মাধ্যমে চাষাবাদ করলে California Wonder জাতে হেক্টরপ্রতি ১০-১২ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।












Sunday, November 12, 2017

বিস্ময়কর ফসল সীতালাউ



একবার রোপণের পর ১০ বছর পর্যন্ত একই লতা থেকে বছরের ১২ মাস পাওয়া যাবে সবুজ লাউ। সীতা লাউ একটি বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ । বারি সীতা লাউ-১ জাতটি ২০১০ সালে অনুমোদন করা হয় । 

চারা লাগানর ৫-৬ মাস পর ফুল আসে । ৩০ দিন পর ফল সবজি হিসাবে খাওয়ার উপযোগী হয় । সারা বছর ফল দিতে থাকে । ৫-৭ বছরের একটি গাছ থেকে ২০০ টি ফল পাওয়া যাবে । গড়ে প্রতিটি ফলের ওজন ৭৫০ গ্রাম হয় । যেহেতু গাছ ১০-১৫ বছর বেঁচে থাকে এবং ফল দেয় তাই মজবুত মাচা তৈরি করতে হবে । 
উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত শীত এলএইউ চাষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত । শীত লাঊ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না । 
সিত লাউ বীজ বা শাখা কাটিং এর মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায় । 
চারা রোপণঃ জমিতে সারি থেকে সারি ৩ মিটার এবং গাছ থেকে গাছ ৩ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চারা রোপণ করতে হয় । 
রোপণের সময়ঃ প্রধানত জুন-জুলাই মাস, তবে সেচের সুবিধা থাকলে বছরের যে কোন সময় রোপণ করা যায় ।
বিশেষ জত্নঃ যেহেতু এই ফসলটি ১০-১৫ বছর বেঁচে থাকে এবং ফল দিতে থাকে সুতরাং মজবুত মাচা তৈরি , প্রুনিং ( ছাঁটাই) এবং ফলের আকৃতি ঠিক রাখতে কয়েকবার বোরন সার দিতে হবে । 
সারের পরিমাণ এবং প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সারের নাম
সারের পরিমাণ/ হেক্টর
প্রতি পইতে
পচা গোবর
১০০০০ কেজি
১০ কেজি
ইউরিয়া
৫০০ কেজি
৫০০ গ্রাম
টি এস পি
৪০০ কেজি
৪০০ গ্রাম
এমওপি
৩০০ কেজি
৩০০ গ্রাম
বোরন
২ কেজি
০২ গ্রাম
সমুদয় গোবর, টিএসপি, অর্ধেক এমওপি, বোরন, এবং এক পঞ্চমাংশ ইউরিয়া পিট তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে । বাকি এমওপি এবং ইউরিয়া ৪ কিস্তিতে বছরে প্রয়োগ করতে হবে ।   



কৃষি বিজ্ঞানী ড. হারুনুর রশীদ জানানকাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবনে উৎপাদিত সীতা লাউ একটি দীর্ঘজীবী লতানো উদ্ভিদ।একবার একটি সীতা লাউয়ের লতা জন্মানোর পর এই লতা থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বছরের ১২ মাস লাউ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। লতা এবং লতা ছড়ানোর জন্য মাচাং-এর যত্ন নিলেই প্রায় প্রতিদিনই একটি লতা থেকে লাউ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। সীতা লাউ সবজি হিসেবে খুবই সুস্বাদুসাধারণ লাউ-এর মত এই লাউ রান্না করা যায়। এ ছাড়া গরুর মাংসের সাথে এই লাউ রান্না করা হলে আরো বেশি সুস্বাদু হয়।


পুষ্টিকর ও সারাবছর উৎপাদন সম্ভব এই সবজির চাষাবাদ সারাদেশে সম্প্রসারিত করা গেলে গ্রীষ্মকালে সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। সীতা লাউয়ের গাছ লতানো বিধায় লাউ কুমড়ার মত বাউনি দিতে হয়। পরিচর্যা ভালো করতে পারলে গাছ ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে সক্ষম। মাঝে-মধ্যে ডালপালা ছাঁটাই করে দিলে নতুন শাখা-প্রশাখা বের হয়ে ফল উৎপাদন বেড়ে যায়।

চারা লাগানোর ৫/৬ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ফুল ফোটার ২৫/৩০ দিনের মধ্যে ফলের ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হয়। একটি গাছ থেকে বছরে ২০০ টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় ফলত্বকসহ পুরো ফলটিই সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়। এর স্বাদঅনেকটা চালকুমড়ার কাছাকাছিতবে একটু মিষ্টি ভাব থাকে। আবার সীতা লাউ পূর্ণ পেকে গেলে এটি সুমিষ্ট রসালো হয়। সীতা লাউয়ের রস দিয়ে শরবত অতি চমৎকার হয়। পাকা ফলে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে তা পেঁপেআনারস বা কলার সাথে চমৎকার মিশ্র ফল ও ডেজার্ট হিসেবে খাওয়া যায়।

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সীতা লাউ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়দক্ষিণ আমেরিকাভারতমিয়ানমারথাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে সীতা লাউয়ের চাষ হলেও বাংলাদেশে এই লাউয়ের চাষ বিস্তৃতি লাভ করেনি প্রয়োজনীয় গবেষণার অভাবে। কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ১২ বছর গবেষণার পর বারি সীতা লাউ-১ নামের একটি জাত উদ্ভাবন ও চাষের জন্য অবমুক্ত করেছে।