কচুরি
পানা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরী করতে আসল কাঁচামাল কচুরিপানা ছাড়াও খড়কুটা, ঝরাপাতা, আগাছা, আবর্জনা, ফসলের
অবশিষ্টাংশ একত্রে মিশিয়ে পচানো হয়-যা থেকে উৎকৃষ্ট মানের কম্পোস্ট উৎপাদন
সম্ভব। বর্ষায় বাংলাদেশে ডোবা-নালা সহ জালাঞ্চলগুলো কচুরিপানায়
ভরে ওঠে। যার ফলে পানি দূষিত হয় এবং মশার উপদ্রব বাড়ে।অথচ এই কচুরিপানাকেই
আমরা কম্পোস্টের আসল কাঁচামাল হিসাবে গণ্য করতে পারি।
উত্তম পচানো কম্পোস্ট সারের গড়মান গোবরের চেয়ে উন্নত হয়।
কম্পোস্ট সারে বিদ্যমান
পুষ্টি উপাদানের মান কিরুপ হবে তা নির্ভর করে কি কি দ্রব্য পচিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয় তার ওপর। কম্পোস্ট সার
ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক সারের
কার্যকারিতা বাড়ে।
কম্পোষ্ট
তৈরীর কাজে কচুরিপানা একটি উৎকৃষ্ট উপাদান। এর সাথে আগাছা, শস্যের অবশিষ্টাংশ,
লতাপাতা, জংলা, পালানের উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি একত্রে মিশিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। তবে
সারের গুণগত মান বাড়াতে হলে হরেক রকমের জিনিস দিয়ে কম্পোস্ট তৈরী করা উত্তম।
উদাহরণ স্বরুপ, কচুরিপানায় পটাসিয়ামের আধিক্য রয়েছে
আবার আখ পাতায় নাইট্রোজেন বেশি রয়েছে। কাজেই এ দু´টো
একত্রে মিশিয়ে সার তৈরি করলে উন্নত মানের কম্পোস্ট পাওয়া যাবে আবার হরেক রকম
আবর্জনা মিশালে খাদ্য উপাদানের পরিমাণ আরও বাড়বে।
আমরা
সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরী করতে পারি।
১। স্তূপ পদ্ধতি
স্তূপ পদ্ধতিতে অতিবৃষ্টি ও বন্যাযুক্ত এলাকার জন্য স্তূপ বা গাদা পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরী করতে হবে।বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুর বা ডোবার ধারে কিংবা ক্ষেতের ধারে যেখানে বন্যার কিংবা বৃষ্টির পানি দাঁড়াবার কোন সম্ভাবনা নেইএমন জায়গাকে স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরীর স্থান হিসাবে নির্বাচন করতে হবে।স্তূপের উপরে চালা দিতে হবে অথবা গাছর নিচে স্থান নির্বাচন করতে হবে যাতে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়।
১। স্তূপ পদ্ধতি
স্তূপ পদ্ধতিতে অতিবৃষ্টি ও বন্যাযুক্ত এলাকার জন্য স্তূপ বা গাদা পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরী করতে হবে।বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুর বা ডোবার ধারে কিংবা ক্ষেতের ধারে যেখানে বন্যার কিংবা বৃষ্টির পানি দাঁড়াবার কোন সম্ভাবনা নেইএমন জায়গাকে স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরীর স্থান হিসাবে নির্বাচন করতে হবে।স্তূপের উপরে চালা দিতে হবে অথবা গাছর নিচে স্থান নির্বাচন করতে হবে যাতে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়।
স্তূপের আকার
এই পদ্ধতিতে গাছের ছায়ায় মাটির ওপর ৩ মিটার দৈর্ঘ্য ১.২৫ মিটার প্রস্থ ও ১.২৫ মিটার উচুঁ গাদা তৈরী করুন।আপনার সুবিধা অনুযায়ী এই মাপ কম-বেশি করতে পারেন। প্রথমত কচুরিপানা অথবা অন্যান্য আবর্জনা ফেলে ১৫ সে. মিটার স্তূপ তৈরী করুন।স্তর সাজানোর আগে কচুরি পানা টুকরা করে ২/৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
এবার
সাজানো স্তরের ওপর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০০ গ্রাম টিএসপি ছিটিয়ে দেয়ার পর
স্তরের উপরিভাগে ২.৫/৫ সে. মি. পুরু করে কাদা ও গোবরের প্রলেপ দিয়ে দিন। এতে পচন ক্রিয়ার গতি যেমন
বাড়বে অন্যদিকে সুপার কম্পোস্ট তৈরী হবে। এভাবে ১.২৫ মিটার উঁচু না
হওয়া পর্যন্ত ১৫ সে. মি. পুরু স্তর সাজানোর পর পর ইউরিয়া ও টিএসপি দিয়ে
তার ওপর গোবর ও কাদা মাটির প্রলেপ দিন।গাদা তৈরী শেষ হয়ে গেলে গাদার ওপর
মাটির প্রলেপ দিয়ে ছাউনির ব্যবস্থা করুন।
কম্পোস্ট স্তূপ পরীক্ষা
কম্পোস্ট স্তূপ পরীক্ষা
কম্পোস্ট স্তূপ তৈরী করার এক সপ্তাহ পর শক্ত কাঠি গাদার মাঝখানে ঢুকিয়ে দেখুন গাদা অতিরিক্ত ভেজা কিনা। যদি ভেজা হয় তবে গাদার উপরিভাগে বিভিন্ন অংশে কাঠি দিয়ে ছিদ্র করে দিনে যেন বাতাস ঢুকতে পারে। ২/৩ দিন পর গর্ত বা ছিদ্রগুলো মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিন।
আবার গাদা অতিরিক্ত শুকিয়ে গেলে ছিদ্র করে পানি অথবা গো-চনা ঢেলে দিন।
এতে
সার ভালো হবে। কম্পোস্ট তাড়াতাড়ি পচে সার হওয়ার জন্য স্তর সাজানোর ১ মাস পর প্রথমবার
এবং ২ মাস পর দ্বিতীয় বার গাদার স্তরগুলো উল্টিয়ে দিন। এসময় কম পচা আবর্জনাগুলো
গাদার মাঝখানে রাখুন।আবর্জনা সার ঠিকমতো পচলে ধূসর বা কালো বর্ণ ধারণ করবে এবং আঙ্গুলে চাপ
দিলে যদি গুঁড়া হয়ে যায় তবে মনে করবেন মাঠে ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে। উল্লেখিত পর্দাথের মাপগুলো
যদি ঠিকমত দেয়া হয় তবে এ জাতীয় কম্পোস্ট গাদা ৩ মাসের মধ্যে উন্নতমানের
সারে রূপান্তরিত হয়।
২। গর্ত পদ্ধতি
২। গর্ত পদ্ধতি
গর্ত পদ্ধতিতে পানি দাঁড়ায় না কিংবা কম বৃষ্টিপাত এলাকা কিংবা শুকনো মৌসুমে গর্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরী করা যায় । গাছের ছায়ার নিচে বাড়ির পেছন দিকে অথবা গোশালার পাশেই কম্পোস্ট গর্ত তৈরী করা সব দিক থেকে সুবিধাজনক।
আপনার প্রাপ্ত স্থানের সাথে সঙ্গতি রেখে গর্ত তৈরী করুন। তবে ১.২৫ মিটার প্রস্থ, ১ মিটার গভীর ও ২.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি গর্ত তৈরী করুন।
গর্তের তলায় বালু অথবা কাঁকর দিয়ে দরমুজ করে দিন যাতে জলীয় পদার্থ শোষণ করে নিতে পারে। প্রয়োজনে ধানের খড়ও বিছিয়ে দিতে পারেন, তাও সম্ভব না হলে গোবর কাদার সাথে মিশিয়ে গর্তের তলা এবং চারপাশে লেপে দিন। মনে রাখবেন গর্তের ওপর দিকে ভুমি থেকে খানিকটা উঁচু করে আইল তৈরী করে দিতে হবে যাতে কোন রকমে পানি গড়িয়ে গর্তে পড়তে না পারে।
এবার গাদা পদ্ধতির মতো করে গর্তে কচুরি পানা স্তরে স্তরে সাজিয়ে কম্পোস্ট তৈরী করুন। অথবা গোয়াল ঘরে গোবর, গো-চনা, পাতা, আখের ছোবড়া, কলাপাতা যাবতীয় উচ্ছিষ্ট অংশ গর্তে ফেলুন।সম্ভব হলে গো-চনার সাথে কাঠের গুঁরা মিশিয়ে দিতে পারলে ভালহয়।
এমনি এক একটি স্তরের ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে দিন। মনে রাখবেন, মাটির প্রলেপ দেয়ার আগে স্তর ভালভাবে ঠেসে দিতে হবে। গর্ত ভরাট না হওয়া পর্যন্ত এমনি ভাবে স্তর তৈরী করুন।
প্রত্যেকটি স্তর তৈরীর পর মাটির প্রলেপ দেয়ার আগে পরিমান মতো ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিন। এরূপ একটি গর্তে তিন টন আবর্জনার জন্য ১/২ কেজি ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হবে।
প্রথমে
২ ফুট পুরু করে আবর্জনা সাজাতে হবে। এরপর ২ ফুট পুরু করে পঁচা মাটি; তাজা গোবর এবং আধা
কেজি ইউরিয়া সার ও সামান্য হাড়ের গুড়া ছিটিয়ে দিতে হবে। গোমূত্র বা গোশালার পানি
দিয়ে স্তুপ ভিজিয়ে দিলে ভাল হয়। তবে অতিরিক্ত পনি ব্যবহার করা যাবে না। আবর্জনায়
কচুরিপানা থাকলে পানি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এভাবে প্রথম স্তুপের উপর এক ফুট পুরু
করে মোট চারটি স্তরে সাজাতে হবে। প্রতি ১০০ বর্গফট এলাকায় কম্পোস্টের জন্য এক কেজি
ইউরিয়া ও তিন কেজি হাড়ের গুড়া মিশালে ভাল হয়। স্তুপ গুলো হালকা করে সাজাতে হবে
যাতে বায়ু চলাচলে সমস্যা না হয়। কম্পোস্ট স্তুপের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য স্তুপের
উপর একটি হালকা মাটির প্রলেপ দিতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে মোট ৩ থেকে ৪ বার
স্তুপ উল্টিয়ে দিতে হবে।
গর্ত
ভরাট হয়ে যাওয়ার পর গোবর ও মাটি মিশিয়ে উপরিভাগে প্রলেপ দিয়ে দিন। সার
যাতে শুকিয়ে না যায় তা পরীক্ষা করতে হবে। গর্তের মাঝখানে ছিদ্র করে দেখতে হবে, যদি শুকনো মনে হয় তবে
ছিদ্র দিয়ে পানি ঢালতে হবে। জৈবপদার্থে পানির পরিমাণ
৬০-৭০ ভাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। এভাবে তিন মাস রাখার পর এই সার ব্যবহার উপযোগী হবে।
গর্ত
পদ্ধতির কিছু নিয়মঃ
গর্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরির ক্ষেত্রে কোন
স্থানে ৩ টি গর্ত খনন করে ২টি স্তুপ সাজাতে হবে একটি খালি
রাখতে হবে। এক মাস পর খালি পরিখার পার্শ্ববর্তী স্তুপ হতে আবর্জনা উল্টিয়ে খালি
পরিখায় স্তুপাকারে সাজাতে হবে। এভাবে প্রত্যেকটি স্তুপ ৩ থেকে ৪ বার উল্টিয়ে সাজতে
হবে।
এতে থাকে ১.৪ শতাংশ
নাইট্রোজেন, ১ শতাংশ ফসফরাস ও ১.৪ শতাংশ পটাসিয়াম।
কম্পোস্ট ব্যবহারের উপকারীতা
১. মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি
করে ও মাটিকে সমৃদ্ধ করে।
২. বেলে মাটির পানি ধারণ
ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং পুষ্টি উপাদান যুক্ত করে।
৩. এটেল মাটিকে ঝুরঝুরে করে
ও এর বায়ুচলাচল বৃদ্ধি করে।
৪. সবজি ফসলে মালচিং এর কাজ
করে।
৫. ভূমিক্ষয় রোধ করতে সহায়তা
করে।
৬. মাটিতে উপকারী অনুজীবের
কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
৭. মাটির পি-এইচ বা রাসায়নিক
বিক্রিয়ার মান নিরপেক্ষ রাখতে সহায়তা করে।
৮. পট অথবা টবের মাটির সহিত
কম্পোস্ট ব্যবহার করে চারা রোপন করা হয়।
No comments:
Post a Comment