Saturday, December 9, 2017

কুইক কম্পোস্ট সার




বাজারে অনেক জৈব সার পাওয়া গেলেও তা গুনগত মানের দিক থেকে অতি নিম্ন। তাই খুব অল্প সময়ে আমরা যদি জৈব সার তৈরি করে তা মাটিতে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমরা খুব সহজেই এ দেশের মাটির হারানো গুনাবলী ফিরিয়ে আনতে পারবো। অর্থাৎ মাটিতে যে পরিমান জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন, তা পূরণ করতে সক্ষম হব।

কুইক কম্পোস্ট মানে যে কম্পোস্ট সার দ্রুত পচিয়ে তৈরি করা যায়। এই জৈব সার ব্যবহারে মাটির উৎপাদিকা শক্তি যেমন ঠিক থাকবে অন্যদিকে রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীলতাও কিছুটা হ্রাস পাবে। সাধারণ নিয়মে কম্পোস্ট সার তৈরি করতে যেখানে ৪ থেকে ৬ মাস সময় লাগে সেখানে ১৮ থেকে ২১ দিনের মধ্যে কুইক কম্পোস্ট সার তৈরি করা যায়।

আর এ কাজটি কুইক কম্পোস্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে খুব সহজেই প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ সার তৈরিতে যেসব উপকরণের প্রয়োজন হয় তাহলো-খৈল, চালের কুড়া বা কাঠের গুড়া, পঁচা গোবর অথবা হাঁস মুরগির বিষ্ঠা। 



এসব উপকরণ যে অনুপাতে মেশাতে হবে তাহলো একভাগ খৈলের সঙ্গে দুইভাগ চালের কুড়া বা কাঠের গুড়া, তার সঙ্গে চার ভাগ পঁচা গোবর বা হাঁস মুরগির বিষ্ঠা। সাত কেজি কুইক কম্পোস্ট তৈরি করতে এক কেজি খৈল, দুই কেজি চালের কুঁড়া বা কাঠের গুড়া এবং চার কেজি পঁচা গোবর অথবা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা মিশাতে হবে।

কুইক কম্পোস্ট তৈরীর উপাদান সরিষার খৈল, কাঠের গুঁড়া বা চাউলের কুঁড়া ও অর্ধপঁচা (ডিকম্পোজড) গোবর বা হাঁস মুরগরি বিষ্ঠা যার অনুপাত হবে ১ : ২ : ৪ অর্থাৎ একভাগ খৈল + দুইভাগ কাঠের/চাউলের কুঁড়া + চারভাগ গোবর/হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা।
স্থানঃ উঁচু জায়গা যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। সরাসরি রোদ পড়ে না, এমন স্থান অথবা ছায়াযুক্ত স্থান। ছাউনি বা চালার নিচে অথবা বৃষ্টির পানি পড়ে না এমন স্থান ব্যবহার করা যেতে পারে।

কুইক কম্পোস্ট তৈরী পদ্ধতিঃ
১। গুঁড়া করা সরিষার খৈল, চাউলের কুঁড়া / কাঠের গুঁড়া ও ডিকম্পোজড গোবর ভালভাবে মিশাতে হবে।
২। মিশ্রনে পরিমান মত পানি যোগ করে এমনভাবে কাই বানাতে হবে যাতে ঐ মিশ্রণ দিযে কম্পোস্ট বল তৈরি করলে ভেঙ্গে যাবেনা কিন্তু ১ মিটার উপর থেকে ছেড়ে দিলে তা ভেঙ্গে যাবে।
৩। মিশ্রিত পদার্থগুলো স্তুপ করে এমন ভাবে রেখে দিতে হবে যাতে ভিতরে জলীয় বাষ্প বের হতে না পারে আর এ কারণে পচনক্রিয়া সহজতর হয়। স্তুপটির পরিমান ৩০০- ৪০০ কেজির মধ্যে হওয়া ভাল। স্তুপের সমসত্ম উপাদান একবারে না মিশিয়ে ৩/ ৪ বারে মিশাতে হবে।
৪। শীতকালে স্তুপের উপরে ও চারদিকে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। আর বর্ষাকালে বৃষ্টির জন্য পলিথিন সীট ব্যবহার করতে হবে এবং বৃষ্টি থেমে গেলে পলিথিন সরিয়ে ফেলতে হবে।
৫। স্তুপ তৈরীর ২৪ ঘন্টা পর থেকে স্তুপের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং ৪৮-৭২ ঘন্টার মধ্যে ৬০-৭০ সেঃ তাপমাত্রায় পৌছায়। অর্থাৎ স্তুপে তখন আঙ্গুল ঢোকালে অসহনীয় তাপমাত্রা অনুভূত হবে (৬০-৭০ সেঃ)। যার ফলে সৃষ্ট তাপে মিশ্রিত পদার্থ পুড়ে নষ্ট হতে পারে। তাই স্তুপ ভেঙ্গে উলট
পালট করে ১ ঘন্টা সময়ের জন্য মিশ্রনকে ঠান্ডা করে নিতে হবে এবং পুনরায় পূর্বের ন্যায় স্তুপ করে রাখতে হবে।
৬। এভাবে ৪৮-৭২ ঘন্টা পর পর স্তুপ ভেঙ্গে উলট- পালট করতে থাকলে ১৫ দিনের মধ্যে উক্ত উন্নত মিশ্র জৈব সার জমিতে প্রয়োগের উপযোগী হবে। সার তৈরী হলে তা ঝুরঝুরে শুকনা হবে এবং কালো বাদামী বর্ণের হবে।


প্রয়োগমাত্রাঃ
১। জমির উর্বরতা ও ফসলভেদে প্রতি শতাংশে প্রায় ৬-১০ কেজি কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে হয়। ফসলের জমি তৈরীর সময়ে প্রতি শতাংশে ৬ কেজি এবং ধান চাষের ক্ষেত্রে কুশি পর্যায়ে সেচের পূর্বে ২ কেজি করে উপরি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
২। সবজী ফসলের ক্ষেত্রে জমি তৈরীর সময়ে প্রতি শতাংশে ৬ কেজি এবং ৪ কেজি সার রিং বা নালা করে সব্জী বেডে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হয়।
৩। বিভিন্ন সবজির মাদায় চারা বা গাছের চারপাশে ছিটিয়ে নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে সেচ দিলে গাছ দ্রুত বাড়বে।
৪। কুইক কম্পোস্ট সারের ব্যবহার এই সারের সবচেয়ে বড় উপকার হলো এটি আপনি সব ধরণের গাছের জন্যই ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া কুইক কম্পোস্ট সার প্রয়োগের ফলে মাটির উর্বরতাও বেড়ে যায়। কুইক কম্পোস্ট জমিতে ছিটিয়ে দেয়ার সাথে চাষ দিয়ে মাটির সাথ মিশিয়ে দিন। 
 
পুষ্টিমান ও ব্যবহারের উপকারীতাঃ
কুইক কম্পোস্ট সারে নাইট্রোজেন ২.৫৬%, ফসফরাস -০.৯৮%, ও পটাশিয়াম- ০.৭৫% পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কিছু গৌণ খাদ্য উপাদান থাকে।
কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়, অনুজীবের ক্রিয়া বাড়তে থাকে, ফসলের প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান সহজ লভ্য হয়। ফলে আশানরূপ ফলন পাওয়া যায় এবং গুনগত মান সম্পন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়।



কম্পোস্ট সার ব্যাহারের সুবিধাঃ
১। কম্পোস্ট সার ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্য ভাল থাকে। ফলন বেশি পাওয়া যায়
২। মাটিতে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে তুলনামূলকভাবে কম সেচ দরকার হয়
৩। মাটির উপকারী পোকামাকড়ের বেঁচে থাকার জন্য সহায়ক পরিবেশ পায়
৪। মাটি গরম হওয়া থেকে রক্ষ পায়
৫। কম্পোস্ট সার বালাইনাশক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়। কারণ কম্পোস্ট সারে বিভিন্ন উপকারী জীব থাকে যা গাছকে রোগবালাই থেকে রক্ষা করে।
 


সংরক্ষণঃ
এই সার চটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে অনেক দিন ধরে সংরক্ষণ করা যায় তার জন্য সারগুলোকে ছায়াযুক্ত স্থানে এমনভাবে শুকাতে হবে, যাতে বস্তা সারের পানিতে পচে না যায়। সার ঝুরঝুরে শুকনা এবং সার হাতে মুঠায় নিয়ে জোরে চাপ দিলে ও হাতে কোন রস দেখা যাবে না।










No comments:

Post a Comment