Vegetable


Papaya:
পেঁপের ইংরেজি নাম Papaya ও বৈজ্ঞানিক নাম Carica papaya. আমাদের দেশের আবহাওয়া ও মাটি পেঁপে চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গাতেই পেঁপে জন্মায়

বাংলাদেশে পেঁপে খুবই জনপ্রিয়। শুধুমাত্র ফল নয় সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পেঁপেতে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি আছে। পরিচর্যা করলে সব ধরনের মাটিতেই পেঁপে চাষ করা যায়। সাধারণত এক বছরের মাথায় পেঁপে গাছে ফল ধরে। একটি গাছে বছরে ০ থেকে ৭০টি ফল ধরে, সেই হিসেবে ৫০০ গাছে বছরে প্রায় ১৫০০০ থেকে ৩৫০০০টি পেঁপে ধরে।

কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামঝি এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। শাহী পেঁপে সারাবছর চাষ করা যায়।

 

চারা তৈরিঃ

 ১. বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়।

 ২. পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

 ৩. ১৫ X ১০ সে.মি. আকারের ব্যাগে সমান পরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে।

 ৪. তারপর সদ্য তোলা বীজ হলে একটি এবং পুরাতন হলে ২-৩টি বীজ বপন করতে হবে।

 ৫. একটি ব্যাগে একের বেশি চারা রাখা উচিত নয়।


চারা রোপণ পদ্ধতিঃ
 ১. দেড় থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।
২. ২ মিটার দূরে দূরে ৬০ X ৬০ X ৬০ সে.মি. আকারের গর্ত করতে হয়।
৩. চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়।
৪. পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি. নালা রাখলে ভালো।

সার প্রয়োগঃ

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে পেঁপে গাছে যতটুকু সম্ভব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

রোগবালাইঃ

পেঁপের ঢলে পড়া রোগে প্রচুর গাছ মারা যায়। তাছাড়া এ রোগের জীবাণুর আক্রমণে বর্ষা মৌসুমে কান্ড পচা রোগও হয়ে থাকে। পিথিয়াম এ্যাফানিডারমাটাম নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। বর্ষা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। অনেক সময় জিংকের অভাবে মোজাইকের মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়।

প্রতিকারঃ

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে। 

চাষের সময় পরিচর্যাঃ
 ১. প্রতি গর্তে ৩টি চারা রোপণ করা যায়।
২. ফুল আসলে ১টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে।
৩. পরাগায়নের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখতে হবে।
৪. ফুল থেকে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে।
৫. গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙ্গে তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।
৬. দুই সারির মাঝখানে নালার মাধ্যমে পানি নিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ফলের কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।

সার প্রয়োগের মাত্রাঃ 
সার
প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার

এই সার বাড়িতেই তৈরি করা সম্ভব। 
বিকল্প হিসেবে (প্রতি গাছে)
টিএসপি=৬৫ গ্রাম
ইউরিয়া=৬৫ গ্রাম
এমপি=৬৫ গ্রাম
জিপসাম=৩৪ গ্রাম
বোরাক্স=৪ গ্রাম
জিংক সালফেট=২.৪ গ্রাম


 











Red Lady Papaya:


রেড লেডী এফ -১ হাইব্রিড পেঁপে বিস্তারিত
  
এটি তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে। রেডলেডি জাতের প্রত্যেক টি গাছে পেঁপে ধরে এই জাতের পেঁপে গুলি বেশ বড়। ফলের রং লাল-সবুজ। এক একটি ফলের ওজন ১..৫ থেকে ২ কেজি। মাংস বেশ পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেঃ মিঃ হয় তখন ফল ধরা শুরু হয় প্রতিটি গাছ ৪০ টির অধিক ফল ধারন করে। কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়। পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না বলেই, দূর দুরান্তে বাজারজাত করা যায়। এই জাতের পেঁপে রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতা আছে।

অঙ্কুরিত হার ৭৫%-৯৫% বীজের পরিমান ২ গ্রাম ( ১২০-১৪০ টি )
প্রতিটি গাছে ফলন ৫০-১২০ পর্যন্ত  ফল ধারন করে।
ফলের আকার এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজি।

বীজের হার:
প্রতি গ্রামে বীজের সংখ্যা ৬০-৭০টি।  - গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয় ৫০০ গাছের জন্য

চারা তৈরিঃ
বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজের প্যাকেট কেটে  ২ ঘন্টা রোদে শুকানোর পর ঠান্ডা জায়গায় রেখে ঠান্ডা করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভেজানোর পর পলেথিন ব্যাগে চারা তৈরি করতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপনের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ৫X৬ সেঃ মিঃ আকারে ব্যাগে সম পরিমাণ বেলে দোয়াশ মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে, ব্যাগের তলায় ২-৩ টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে একটি এবং পুরাতন বীজ হলে ২টি বীজ বপন করতে হবে। ১টি ব্যাগে এক এর অধিক চারা রাখা উচিৎ নয়।

রেডলেডি হাইব্রিড পেঁপে জাতের বৈশিষ্ট্যঃ
এটি তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে।
রেডলেডি জাতের প্রত্যেক টি গাছে পেঁপে ধরে ।

রেডলেডি জাতের পেঁপে গাছ সর্বচো ১০ ফিট হয়।
গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেঃ মিঃ হয় তখন ফল ধরা শুরু হয়।
প্রতিটি গাছে ৫০-১২০ পর্যন্ত ফল ধারন করে।

৫-৬ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং প্রথম ফল পাওয়া যায় ৭-৯ মাসের মধ্য।
এই জাতের পেঁপে গুলি বেশ বড়।
ফলের রং লাল-সবুজ।

এক একটি ফলের ওজন ১.৫ থেকে ২ কেজি।
মাংস বেশ পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদে বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত।
কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবে বাজারজাত করা যায়।
পাকা অবস্থায় সহজে নষ্ট হয় না বলেই, দূর দুরান্তে বাজারজাত করা যায়।
এই জাতের পেঁপে রিং স্পট ভাইরাস রোগ সহ্য ক্ষমতা আছে।
এই জাতের জীবন কাল ২ বছর অধিক।

সার প্রয়োগের মাত্রাঃ 




সার
প্রয়োজন অনুসারে জৈব সার

এই সার বাড়িতেই তৈরি করা সম্ভব। 
বিকল্প হিসেবে (প্রতি গাছে)
টিএসপি=৬৫ গ্রাম
ইউরিয়া=৬৫ গ্রাম
এমপি=৬৫ গ্রাম
জিপসাম=৩৪ গ্রাম
বোরাক্স=৪ গ্রাম
জিংক সালফেট=২.৪ গ্রাম



চারা রোপণ পদ্ধতিঃ

 ১. দেড় থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।

২. ২ মিটার দূরে দূরে ৬০ X ৬০ X ৬০ সে.মি. আকারের গর্ত করতে হয়।

৩. চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়।

৪. পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি. নালা রাখলে ভালো।


রেডলেডি উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে জাতটি বাংলাদেরশের আবহওয়াতে চাষ উপযোগী। বাংলাদেশের অনেক স্থানে এর চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে ফলন খুবই ভাল হচ্ছে। বান্দরবানের মাটি ও আবহাওয়া রেডলেডি পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী।


  











গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ

টমেটো এখন এক দামি সবজি। অসময়ে হলে তো কথাই নেই, গ্রীষ্মকালীন টমেটো শীতের চেয়ে অন্তত চার-পাঁচ গুণ দামে বিক্রি হবে। শীতেও চাষ করে ভালো লাভ করা যেতে পারে যদি আগাম চাষ করা যায়। সে জন্য যেসব জাত আগাম ভালো ফল দেয় সেসব জাত চাষ করতে হবে। অসময়ে বা গরমকালে ফল ধরে এমন জাতও আগাম লাগানো যেতে পারে। বর্তমানে অধিক ফলন দেয় ও আকর্ষণীয় রঙ হয় এমন অনেক হাইব্রিড জাতের বীজ এ দেশে পাওয়া যাচ্ছে। সেসব জাতের বীজ কিনে চাষ করতে এখনই লেগে পড়তে পারেন।


আগাম জাতঃ- আগাম টমেটো চাষ করার জন্য প্রধান প্রধান জাত হচ্ছে বিনাটমেটো ৩, বিনাটমেটো ৪, বারিটমেটো ৪, বারিটমেটো ৫ এবং বারিটমেটো ৬ (চৈতী)। গ্রীষ্মকালীন টমেটো পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাত চাষ করা হয়। একটি ছাউনি ২০ মিটার ´২.৩ মিটার আকৃতির হলে ভালো। ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া ২টি বীজতলায় লম্বালম্বিভাবে ১টি করে ছাউনির ব্যবস্থা করে নিতে হবে। ছাউনির খুঁটির উভয় পাশের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার এবং মাঝখানের খুঁটির উচ্চতা ২১০ সেন্টিমিটার হতে হবে। জমি নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিতে হয়। ২টি ছাউনির মাঝে ৭৫ সেন্টিমিটার চওড়া নিকাশ নালা রাখলে ভালো হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ২টি বীজতলা রাখতে হবে।

বীজতলাঃ- জমি থেকে বীজতলার উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার রাখা দরকার। ২টি বীজতলার মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা রাখতে হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ৪টি সারি রাখতে হবে।

চারা রোপণঃ- ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা প্রতি বেডে ২ সারিতে রোপণ করতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার রাখলে ভালো হবে।

আগাম ফসলঃ গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জন্য টমাটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। হ্যান্ড স্প্রেয়ারের সাহায্যে ৫ চা চামচ (প্রতি লিটার পানিতে) টমাটোটোন শুধু ফুটন্ত ফুলে ৮ থেকে ১০ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হয়। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে সারা বছর টমেটো চাষ করা সম্ভব। টমাটোটোন দ্বারা উৎপাদিত ফলে বীজ হয় না।


পোকা দমনঃ শোষক পোকা এবং জাবপোকা গাছের রস শোষণ করে। শোষক পোকা দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন, সেভিন কিংবা নেক্সিয়ন এবং জাবপোকা দমনের জন্য এফিডান ডাস্টিং (৫%) কিংবা সেফস, নেক্সিয়ন ও ডাইব্রম ব্যবহার করতে হয়।

রোগ দমনঃ- টমেটোর ৩টি রোগ গুরুত্বপূর্ণ। ঢলে পড়া রোগ, টমেটো মোজাইক ভাইরাস এবং ফিউজেরিয়াম উইল্ট। ঢলে পড়া রোগে গাছে ফুল আসার আগেই ঢলে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করা, আক্রান্ত জমিতে পরবর্তী ৪-৫ বছর টমেটো, আলু, মরিচ ও বেগুন চাষ না করা এবং প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা। মোজাইক রোগে পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছ ও ফলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়। সুস্থ গাছে কীটনাশক ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা দ্বারা ভাইরাস বহনকারী পোকার আগমন প্রতিরোধ করতে হয়। ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগে গাছ ঢলে পড়ে। পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতা ভেতরের দিকে বেঁকে আসে। এ রোগ মাটির মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়।

শস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ- রোপণের ২-৩ মাস পর থেকে ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। রঙিন নয় এরূপ টমেটো ১০ থেকে ১৫.৫০ সে. তাপে ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। পাকা টমেটো ৫০০ সে. তাপে ১০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।
  









 ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ চাষঃ

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ বেগুন পরিবারের ফসল।



বাংলাদেশে এর ব্যবহার কম হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এর উৎপত্তি স্থল হলো দক্ষিণ আমেরিকার নিরক্ষীয় অঞ্চল। ধারণা করা হয়ে থাকে ব্রাজিল মিষ্টি মরিচের উৎপত্তিস্থান। বিশ্বে আবাদকৃত সব মরিচই একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত যার মধ্যে ১১টি গ্রুপ রয়েছে এবং ঝালবিহীন ও ঝাল মরিচ হিসেবে বিভক্ত করা হয়েছে। মিষ্টি মরিচের ফলের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, তবে সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়।




মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও অতি সম্প্রতি এর চাষ এ দেশে প্রসারিত হচ্ছে বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশপাশে সীমিত পরিসরে কৃষকরা এর চাষ করে থাকে, যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন সুপার মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। মিষ্টি মরিচের রপ্তানি সম্ভাবনাও প্রচুর। বিশ্বে অনেক দেশেই মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বে টমেটোর পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ। এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে যেমন পাতা সালাদ অথবা স্যুপ তৈরিতে ব্যবহার হয়, কাঁচা ফল সালাত এবং রান্না করে সবজি হিসেবে অতি সুস্বাদু খাদ্য। পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এবং টবে চাষের উপযোগী বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

ক্যাপসিকামের উপকারিতাঃ

১।  ক্যান্সার প্রতিরোধ করঃ   ক্যাপসিকামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে সহায়ক। ক্যাপসিকামে রয়েছে সালফার কম্পাউন্ড যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার এবং এসোফেগাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।

২।  দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দূর করেঃ   ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং বেটা ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

৩।  ওজন কমায়ঃ  ক্যাপসিকামের অ্যাক্টিভেটিং থার্মোজেনেসিস এবং হজম শক্তি উন্নত করার ক্ষমতা দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক।

৪।  কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা দূর করেঃ  ক্যাপসিকামে রয়েছে লাইকোপেন না কার্ডিওভ্যস্কুলার নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষভাবে সহায়ক ক্যাপসিকাম।

৫।  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ  ক্যাপসিকামের ভিটামিন সি এবং কে দেহের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে। এতে করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় অনেকাংশে, যার ফলে ছোটোখাটো নানা রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়।

৬।  দেহে আয়রনের অভাব সংক্রান্ত সমস্যা কমায়ঃ   ক্যাপসিকামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি দেহে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। এতে দেহে আয়রনের অভাব জনিত সমস্যা দূর হয়।

৭।  উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমায়ঃ  ক্যাপসিকামের ক্যাপসাইসিন উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে।

৮।  হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করেঃ   পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ক্যাপসিকামের জুস হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা ও পেটের পীড়া জনিত রোগ যেমন গ্যাস হওয়া, ডায়রিয়া, ডিসপেপসিয়া ইত্যাদি দূর করতে সহায়তা করে।


৯। ত্বক পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ উপকারী, এটি ত্বকের র‍্যাশ হওয়া ও ব্রণ প্রতিরোধ করে।

১০। এর ভিটামিন-সি মস্তিষ্কের টিস্যুকে পুনরুজ্জীবিত করে; দেহের হাড়কে সুগঠিত করে। 

১১।  ক্যাপসিকাম যেকোনো ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে কাজ করে।



 নিচে দেওয়া হলো চাষাবাদ ও উৎপাদন কলাকৌশলঃ 

জলবায়ু ও মাটিঃ
ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬০-২৫০সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৬০- ২১০সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে, ফলন ও মান কমে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না। অক্টোবর মাসে বীজ বপন করে নভেম্বরে চারা রোপণ করলে দেখা যায় যে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ জন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনি, পলি হাউস, পলিভিনাইল হাউসে গাছ লাগালে রাতে ভিতরের তাপমাত্রা বাইরে অপেক্ষা বেশি থাকে। উন্নত বিশ্বে যেমন- জাপান, আমেরিকা, বৃটেন, নেদারল্যান্ড, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশে গ্রিন হাউস গ্লাস হাউস, পলি হাউস ইত্যাদির মাধ্যমে তাপমাত্রা ও আলো নিয়ন্ত্রণ করে বছরব্যাপী লাভজনকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করছে। এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও একই পদ্ধতি গ্রহণ করে প্রচুর ক্যাপসিকামের চাষ হচ্ছে। ফুল এবং ফল ধারণ দিবস দৈর্ঘ্য দ্বারা প্রভাবিত হয় না। কিন্তু আলোক তীব্রতা এবং আর্দ্রতা ফল ধারণে প্রভাব ফেলে। সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য উত্তম। মিষ্টি মরিচ খরা এবং জলাবদ্ধতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। মিষ্টি মরিচের জন্য মাটির অম্ল ক্ষারত্ব ৫.৫-৭.০ এর মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়।




জাত- আমাদের দেশে আবাদকৃত জাতগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে
California Wonder, Tender Bell (F1)এবং Yellow Wonder ইত্যাদি । প্রতি বছর এগুলোর বীজ আমদানি করতে হয়। তবে আমাদের দেশে California Wonder এর বীজ উৎপাদন করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
জীবন কাল: জাত ও মৌসুমভেদে মিষ্টি মরিচের জীবনকাল ১২০ থেকে ১৪০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বীজ বপনের সময়: অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস।
বীজের মাত্রা: প্রতি হেক্টরে ৩০ হাজার চারার জন্য প্রায় ২৩০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয় ।

চারা উৎপাদনঃ
প্রথমে বীজগুলো ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সুনিষ্কাশিত উঁচু বীজতলায় মাটি মিহি করে ১০x২ সে.মি. দূরে দূরে বীজ বপন করে হালকাভাবে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজতলায় প্রয়োজনানুসারে ঝাঝরি দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে। বীজ গজাতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। বীজ বপনের ৭-১০দিন পর চারা ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হলে ৯-১২ সে.মি. আকারের পলি ব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। পটিং মিডিয়াতে ৩:১:১ অনুপাতে যথাক্রমে মাটি, কম্পোস্ট এবং বালি মিশাতে হবে। পরে পলিব্যাগ ছায়াযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে, যাতে প্রখর সূর্যালোকে এবং ঝড় বৃষ্টি আঘাত হানতে না পারে। উল্লেখ্য যে, অক্টোবর মাস হচ্ছে বীজ বপনের উত্তম সময়।

জমি তৈরি, সার প্রয়োগ ও চারা রোপণঃ
ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে যাতে জমিতে বড় বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে। মিষ্টি মরিচ চাষে প্রতি শতাংশে গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৪ কেজি, এমপি ১ কেজি, জিপসাম ৪৫০ গ্রাম এবং জিংক অক্সাইড ২০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর, টিএসপি, জিংক অক্সাইড, জিপসাম, ১/৩ ভাগ এমপি এবং ১/৩ ভাগ ইউরিয়া চারা রোপণের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ২/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমপি পরবর্তীতে দুই ভাগ করে চারা লাগানোর যথাক্রমে ২৫ এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। চারার রোপণ দূরত্ব জাতভেদে ভিন্নতর হয়। সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা ৪৫x৪৫ সে. মি. দূরত্বে রোপণ করা হয়। মাঠে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বেড প্রস্থে ৭৫ সে. মি. হতে হবে এবং লম্বায় দুটি সারিতে ২০টি চারা সংকোলনের জন্য ৯ মিটার বেড হবে। দুটি সারির মাঝখানে ৩০ সে. মি. ড্রেন করতে হবে। চারা পড়ন্ত বিকেলে রোপণ করা উত্তম । চারা রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। প্রতিদিন মাঠ পরিদর্শন করতে হবে। যদি কোনো চারা মারা যায় তাহলে ওই জায়গায় পুনরায় চারা রোপণ করতে হবে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায় এ সময় গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় । কাজেই গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পলিথিন ছাউনিতে গাছ লাগালে রাতে ভেতরের তাপমাত্রা বাইর অপেক্ষা বেশি থাকে এবং গাছের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়।





অন্যান্য পরিচর্যাঃ
মিষ্টি মরিচ খরা ও জলাবদ্ধাতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। জমিতে প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে। আবার অতিরিক্ত সেচ দিলে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো কোনো জাতে ফল ধরা অবস্থায় খুঁটি দিতে হয় যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে। আগাছানাশক বা হাত দিয়ে অথবা নিড়ানি দিয়ে প্রয়োজনীয় আগাছা দমন করতে হবে।

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাঃ 
জাবপোকা (এফিড) কারনে ক্ষতির লক্ষণ : প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক জাবপোকা দলবদ্ধভাবে গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও প্রায়শ নিচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়। জাবপোকার শরীরের পেছন দিকে অবস্থিত দুটি নল দিয়ে মধুর মতো এক প্রকার রস নিসরণ করে। এই রস পাতা ও কান্ডে আটকে গেলে তাতে সুঁটিমোল্ড নামক এক প্রকার কালো রঙের ছত্রাক জন্মায় এবং তার ফলে গাছের সবুজ অংশ ঢেকে যায় এবং সালোকসংশ্লেষণ ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। মেঘলা, কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় এর বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়। প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হলে এর সংখ্যা কমে যায়।

দমন ব্যবস্থা ১ঃ 
প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাবপোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ (১ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবান গোলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুঁড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়। লেডি বার্ড বিটলের পূর্ণাঙ্গ ও কীড়া এবং সিরফিড্ ফ্লাই এর কীড়া জাবপোকা খেয়ে প্রাকৃতিকভাবে দমন করে। সুতরাং উপরোক্ত বন্ধু পোকা সংরক্ষণ করলে এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে শুধু আক্রান্ত স্থানসমূহে কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি বিষক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক, যেমন- ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. হারে অথবা পিরিমর ৫০ ডিপি প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। মৌমাছি বা পরাগায়নে সাহায্যকারী পোকাদের জন্য অনেকটা নিরাপদ। বিষ প্রয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার জন্য কোনো ফল সংগ্রহ করা যাবে না।

থ্রিপস পোকায় ক্ষতির লক্ষণ : পূর্ণাঙ্গ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক থ্রিপস পাতা থেকে রস চুষে খায়। পাতার মধ্যশিরার নিকটবর্তী এলাকা বাদামি রঙ ধারণ করে ও শুকিয়ে যায়। নৌকার খোলের পাতা ওপরের দিকে কুঁকড়িয়ে যায়। গাঢ় বাদামি রঙের পূর্ণাঙ্গ থ্রিপস পোকা খুবই ছোট, সরু ও লম্বাকৃতির। খালি চোখে কোনোমতে এদের দেখা যায়।

দমন ব্যবস্থা ২ঃ 
পাঁচ গ্রাম পরিমাণ গুঁড়া সাবান প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। ক্ষেতে সাদা রঙের ৩০ সে.মি. - ৩০ সে.মি. আকারের বোর্ডে পাতলা করে গ্রিজ বা আঠা লাগিয়ে কাঠির সাহায্যে ৩ মিটার দূরে দূরে আঠা ফাঁদ পেতে থ্রিপস পোকা আকৃষ্ট করে মারা। এক কেজি আধা ভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করা। আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. পরিমাণ) স্প্রে করা।
লালমাকড় (মাইট)- এর কারনে ক্ষতির লক্ষণ : লালমাকড় খাওয়া পাতায় হলুদাভ ছোপ ছোপ দাগের সৃষ্টি হয়। যখন এই ধরনের আক্রমণ পাতার নিচে দিকে মাঝখানে বেশি হয় তখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই পাতা কুঁকড়িয়ে যেতে দেখা যায়। ব্যাপক আক্রমণের ফলে সম্পূর্ণ পাতা হলুদ ও বাদামি রঙ ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত পাতা ঝরে পড়ে। লালমাকড় পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিম পাড়ে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এই ডিম থেকে কমলা রঙের বাচ্চা বের হয়ে বেগুন পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশ খেতে থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চাগুলো গাঢ়-কমলা বা লাল রঙের পূর্ণ মাকড়ে পরিণত হয় যারা দেখতে ক্ষুদ্র মাকড়সার মতো। এদের পাতার নিচের পৃষ্ঠদেশে চলাফেরা করতে দেখা যায়।


দমন ব্যবস্থা ৩ঃ
 
নিমতেল ৫ মি. লি. + ৫ গ্রাম ট্রিকস্ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। এক কেজি আধাভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি হলে নিউরন ৫০০ ইসি অথবা টর্ক ৫৫০ এস সি ২ মি.লি. হারে প্রতি লিটার পানির সাথে স্প্রে করা যেতে পারে। মাকড়নাশক ওমাইট বা টলস্টার (প্রতি লিটার পানিতে ২ মি. লি. পরিমাণ) স্প্রে করা।

রোগবালাইঃ 
এ্যানথ্রাকনোজের রোগের লক্ষণঃ 
পাতায় বসানো দাগ হয়। ফলেও এ দাগ দেখা যায়। পাতা ঝরে পড়ে এবং ফল পচে যায়। পাতায় গোলাকৃতি দাগ দেখা যায়। কুয়াশায় পাতার পচন লক্ষ করা যায়। প্রথমে মধ্যাংশ একটু উঁচু ছোট কালো দাগ হয়। দাগ বাড়তে থাকে এবং পুরো ফলে কালো ছোপ ছোপ দাগ হয়ে ফল পচে যায়। উক্ত ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করলে পরের বছর চারা গজায় না। দমন ব্যবস্থা : ব্যাভিষ্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করা। রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে। ফল পুরোপুরি না পাকিয়ে তুলে নিতে হবে। ক্যাপসিকামের বীজ-ফলে অবশ্যই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে বীজ রোগমুক্ত রাখতে হবে।

ব্লাইট রোগের লক্ষণ: পাতায় দাগ হয়। পাতা ঝলসে যায়।
দমন ব্যবস্থা ৪ঃ  
ব্যাভিষ্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে গুলে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করা। রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করতে হবে।


উইল্টিং রোগের লক্ষণ : গাছ আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে এবং মারা যায়। 
দমন ব্যবস্থা ৫ঃ 
আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলা এবং জমিতে প্লাবন সেচ না দেয়া। 

ফসল তোলা ও ফলনঃ মিষ্টি মরিচ সাধারণত পরিপক্ব সবুজ অবস্থায় লালচে হওয়ার আগেই মাঠ থেকে উঠানো হয়। সাধারণত সপ্তাহে একবার গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। ফল সংগ্রহের পর ঠান্ডা অথচ ছায়াযুক্ত স্থানে বাজারজাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, ফসল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলে সামান্য পরিমাণে বোটা রেখে দিতে হবে। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পলি হাউজের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে সাফল্যজনকভাবে ক্যাপসিকাম উৎপাদন করেছেন। উওম ব্যবস্থা পনার মাধ্যমে চাষাবাদ করলে California Wonder জাতে হেক্টরপ্রতি ১০-১২ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।




















No comments:

Post a Comment