Poultry









































টার্কি মুরগি


টার্কি (ইংরেজি:
Turkey) মেলিয়াগ্রিডিডেই পরিবারের এক ধরণের বৃহদাকৃতির পাখিবিশেষ। এগুলো দেখতে মুরগির বাচ্চার মতো হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক বড়। এক প্রজাতির বুনো টার্কি মেলিয়াগ্রিস গ্যালোপাভো উত্তর আমেরিকা ও মধ্য আমেরিকার বনাঞ্চলে বসবাস করে। গৃহপালিত টার্কি এই প্রজাতি থেকে ভিন্নতর। অন্য জীবিত প্রজাতির মধ্যে মেলিয়াগ্রিস ওসেলাটা বা চক্ষু আকৃতির চিহ্নবিশিষ্ট টার্কি আবাসস্থল হচ্ছে ইউকাতান উপ-দ্বীপের বনাঞ্চলে। বিশ্বের সর্বত্র টার্কি গৃহপালিত পাখিরূপে লালন-পালন করা হয়।
যখন ইউরোপীয়রা প্রথমবারের মতো টার্কিকে আমেরিকায় দেখতে পেল, তখন তারা ভুলবশতঃ ভাবল যে পাখিটি এক ধরণের গিনিয়া মুরগি (নুমিডা মেলিয়াগ্রিস)পরবর্তীকালে তারা তুরস্ক দেশ থেকে মধ্য ইউরোপে পাখিটিকে নিয়ে আসে। গিনিয়া মুরগি বা গিনিয়াফাউল-কে টার্কি ফাউল নামেও ডাকা হয়। তাই, তুরস্ক দেশের নামানুসারে উত্তর আমেরিকার পাখিটির নামকরণ করা হয় টার্কি। ১৫৫০ সালে উইলিয়াম স্ট্রিকল্যান্ড নামীয় এক ইংরেজ নাবিক টার্কি পাখিকে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন।

  • চক্ষু আকৃতির চিহ্নবিশিষ্ট টার্কি (মেলিয়াগ্রিস ওসেলাটা)
পুরুষ টার্কি, স্ত্রী টার্কির তুলনায় অধিকতর বড় এবং অনেক বেশি আকর্ষণীয় রঙের হয়ে থাকে। বাস্টার্ড (অস্ট্রেলিয়ান টার্কি); মেগাপোড (ব্রাশ টার্কি); স্ন্যাকবার্ড (ওয়াটার টার্কি) জাতীয় সমজাতীয় পাখি হলেও টার্কিজাতীয় পাখি নয়।

পূর্ণাঙ্গ পুরুষজাতীয় টার্কির মাথা ন্যাড়া থাকে। সাধারণতঃ এর মাথা উজ্জ্বল লাল রঙের হয়। কখনো কখনো সাদা কিংবা উজ্জ্বল নীলাভ রঙেরও হয়ে থাকে। পুরুষজাতীয় টার্কি গবলার বা টম নামেও পরিচিত। এগুলো গড়ে লম্বায় ১৩০ সে.মি. বা ৫০ ইঞ্চি হয়। গড়পড়তা ওজন ১০ কেজি বা ২২ পাউন্ড হতে পারে। কিন্তু স্ত্রীজাতীয় টার্কি সাধারণতঃ পুরুষের তুলনায় ওজনে অর্ধেক হয়। প্রতিটি স্ত্রীজাতীয় টার্কি ৮ থেকে ১৫টি ছোট ছোট দাগের বাদামী বর্ণাকৃতির ডিম পাড়ে। ২৮ দিন অন্তর ডিম ফুটে বাচ্চা টার্কি জন্মায়।
 




টার্কি একটি পাখির নাম । এটি মূলত বন্য পাখি হলেও বর্তমানে একে গৃহে পালন করা হচ্ছে । এটি অনেক বড় আঁকারের একটি পাখি । বড়িতে প্রায় ছয়মাস পালন করলে এক একটি টার্কি পাখির স্ত্রী জাতের ওজন হয় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং পুরষ জাতের ওজন হয় প্রায় সাত থেকে আট কেজি । পাখির মাংসের মধ্যে দেখা যায় হাস, মুরগী, কোয়েল, তিতির এর পর টার্কির মাংসের অবস্থান । একে বাড়িতে দেশী মুরগীর মতে করে পালন করা যায় । বর্তমানে টার্কি পালন করে অনেক বেকার যুবক তাঁদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছে । টার্কি পালন করলে পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয় ।
 
প্রজাতিগুলি:
১)  ব্রড ব্রেস্টেড ব্রোঞ্জ
পালকের মূল রং কালো, তামাটে নয়৷ মাদী পাখির বুকের পালকের রং কালো, ও তার ডগাগুলি সাদা হয়, যার দরুন মাত্র 12 সপ্তাহ বয়সেই লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়৷
২) ব্রড ব্রেস্টেড হোয়াইট:
এটি ব্রড ব্রেস্টেড ব্রোঞ্জ ও হোয়াইট হল্যাণ্ডের সংকর যার পালকগুলি সাদা হয়৷ সাদা পালকের টার্কির গরম সহ্য করার ক্ষমতা বেশি ও সেই সঙ্গে পালক ছাড়ানোর পরে এদের পরিষ্কার ও ভাল দেখায়৷
৩)  বেল্টসভিল স্মল হোয়াইট:
এটি রং ও আকারে ব্রড  ব্রেস্টেড হোয়াইট প্রজাতির খুবই কাছাকাছি তবে আয়তনে ছোট৷ ভারী প্রজাতিগুলির তুলনায় এদের ডিম দেওয়া, উর্বরতা ও ডিম ফোটার পরিমাণ বেশী হয় এবং ডিমে তা দেওয়ার ঝোঁক কম হয়৷
৪)   নন্দনম টার্কি 1
নন্দনম টার্কি 1 প্রজাতিটি কালো দেশী প্রজাতি ও বিদেশী বেল্টসভিল স্মল হোয়াইট প্রজাতির শংকর৷

বাড়তে টার্কি পাখি পালন করতে হলে সঠিক নিয়মে যত্ন নিতে হবে । টার্কি পাখি সাধারণত নিজেই তাঁর নিজের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় । এছাড়াও টার্কি পাখির ডিম দেশী মুরগী কিংবা ইনকিউবেটর দিয়ে ও ফুটানো যায় ।
টার্কি কে মূলত তিন অবস্থায় পালন করা যায় ।
১। মুক্ত অবস্থায়, ২। অর্ধ মুক্ত অবস্থায়, ৩। বন্ধ অবস্থায়।
 বাড়িতে হাঁস মুরগী এর সাথে টার্কি পালন করা যায় । 

সঠিক নিয়মে টার্কি পালনের পদ্ধতি/কৌশল 

বাড়তে টার্কি পালনে সাধারণত হাঁস মুরগী কিংবা অন্যান্য প্রানীর তুলনায় একটু বেশী যত্ন নিতে হয় । অন্যদের তুলনায় এদের শক্তি, প্রোটিন ও খনিজের প্রয়োজন বেশি ৷ বাড়িতে টার্কি পালনের ক্ষেত্রে একটু বেশী জায়গার প্রয়োজন হয় । বাড়িতে টার্কি পালনে টার্কির বাসস্থান যথাযথ হতে হবে । এক্ষেত্রে আপনি  নারিকেলের ছোবড়া, কাঠের গুড়া, তুষ, বালি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন । টার্কির বাচ্চা পালনের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে দুই ইঞ্চি পুরু লিটারের প্রয়োজন হয় । টার্কি পাখি সাধারণত ৭ মাস বয়স থেকে ডিম দেয়া শুরু করে । 

টার্কির খাবারের পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে খাবার প্রয়োগ

টার্কি সাধারণত দেশী মুরগীর মত পালন করতে হবে । দেশি মুরগীর মত টার্কির খাবার সাধারণত সহজলভ্য । টার্কি পালনে আলাদা কোন সুষম খাবারের প্রয়োজন পড়ে না । বর্তমানে বাজারের ব্রয়লার মুরগি ও পশুখাদ্য মিক্সচারই তাদের সাধারণ খাবার এছাড়াও টার্কি সাধারণত বেশ কিছু খাবার খেয়ে থাকে । যেমন ধান গম, ভুট্টা, সয়াবিন মিল, ঘাসের বীজ, সূর্যমুখী বীজ, ঝিনুক গুড়া ইত্যাদি । তবে মনে রাখবেন টার্কিরা সবুজ শাকপাতা ভালবাসে । তাই টার্কির খাবারের সাথে প্রত্যেহ ৫০% সবুজ শাকসবজি মিশিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন । তবে যদি আবদ্ধ অবস্থায় টার্কি পালন করা হয় তাহলে টার্কিকে অবশ্যই নিয়মিত খাবার দিতে হবে । খেয়াল রাখতে হবে টার্কির খাবার যেন কোন অসুবিধা না হয় ।

টার্কির রোগ বালাই ও তাঁর প্রতিকার 

বাড়িতে টার্কি পালন করার ক্ষেত্রে টার্কির কয়েকটি রোগ বালাই দেখা যায় । টার্কি মারাত্নক কয়েকটি রোগ হল পক্স, এভিয়ান ইনফুলেঞ্জা, মাইটস,  সালমোনেলোসিস,  কলেরা বেশী দেখা যায় । এজন্য টার্কি পালনের সময় টার্কিকে নিয়মিত টিকা দিতে হবে । তবে মনে রাখবেন কোন অবস্থায় রোগাক্রান্ত পাখিকে টিকা দেয়া যাবে না । তবে যদি কোন টার্কি অসুস্থ্য হয় তাহলে উক্ত টার্কিকে যথাশীঘ্রই অন্যান্য টার্কি থেকে সরিয়ে নিতে হবে । অসুস্থ্য টার্কির সংস্পর্শে থাকলে বাকি সুস্থ টার্কিও আক্রান্ত হতে পারে । আর বেশী সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে । তবে খেয়াল রাখবেন পরিবেশের কারণে অনেক রোগ সংক্রমণ হতে পারে ।

কিভাবে টার্কি পাখি ও খাচার যত্ন ও পরিচর্যা করবেন 

টার্কি লালন-পালন পদ্ধতি অনেকটা দেশী মুরগির মতই । টার্কির ঘরের আশেপাশের ঝোপ-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করতে হবে । এবং টার্কির ঘরে যেন পরিপূর্ণ আলো বাতাস প্রবেশ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । টার্কির ঘর সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । তবে মনে রাখবেন টার্কিকে কখনওই মাটিতে খাবার সরবরাহ করবেন না । তাহলে খাবারের অপচয় হবে । এবং টার্কিকে সর্বদা পরিষ্কার পানি দিতে হবে । আর টার্কি পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এদেরকে প্রয়োজন মত জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে হবে । একটি পূর্ণবয়স্ক টার্কির জন্য অন্তত ৪ ৫ বর্গ ফুট জায়গা নিশ্চিত করতে হবে ।

টার্কির উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি
অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় টার্কির উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। প্রতি ২০ সপ্তাহ বয়স থেকে টার্কি ডিম পাড়া শুরু করে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর ১০০টি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার মাত্র ২৮ দিনের মাথায় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়া শুরু করে।  বেশিরভাগ টার্কি বিকাল থেকে সন্ধ্যায় ডিম দেয়।
অনেক জাতের টার্কি রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্ল্যাক, রাঙ্গিন সেট, স্লেট, ব্রোঞ্জ, রয়েল পাম্প ইত্যাদি। এর মধ্যে রয়েল পাম্পের দাম সবচেয়ে বেশি। যা বিক্রি হচ্ছে জোড়াপ্রতি ২০ হাজার টাকা। এগুলো আকারে বেশ বড় হয়ে থাকে।
রজনন সংক্রান্ত অভ্যাসসমূহ

স্বাভাবিক সঙ্গম:
পূর্ণবয়স্ক পুরুষ পাখীর সঙ্গমকালীন আচরণকে সাধারণত স্ট্রাট বলা হয়, যখন তারা ডানাগুলি ছড়িয়ে দেয় ও ঘন ঘন একটি অদ্ভুত আওয়াজ করতে থাকে৷ স্বাভাবিক সঙ্গমে পুরুষ: মাদীর অনুপাত মাঝারি ধরনের টার্কির জন্য 1:5 এবং বড় ধরনের জন্য 1:3 থাকে৷ প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মাদী পাখী থেকে গড়ে 40-50টি ছানা পাওয়ার আশা করা যায়৷ উর্বরতা কমে যাওয়ার দরুন প্রথম বছরের পর পূর্ণবয়স্ক পুরুষ পাখী সঙ্গমের জন্য খুব কমই ব্যবহার করা হয়৷ পূর্ণবয়স্ক পুরুষ পাখীর কোনও একটি বিশেষ মাদীর প্রতি আকর্ষণ জন্মানর প্রবণতা থাকে, তাই প্রতি 15 দিন অন্তর আমাদের পূর্ণবয়স্ক পুরুষ পাখী বদলাতে হয়৷

কৃত্রিম গর্ভাধান:
কৃত্রিম গর্ভাধানের উপকারিতা হল সমগ্র ঋতু ধরে টার্কির পালের উচ্চ উর্বরতা বজায় রাখা৷


প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখির বীর্য সংগ্রহ করা:
  • বীর্য সংগ্রহের জন্য পুরুষ পাখির বয়স 32-36 সপ্তাহ হতে হবে৷
  • বীর্য সংগ্রহের অন্ততঃ 15 দিন আগে থেকে পুরুষ পাখিটিকে একলা রাখতে হবে৷
  • পুরুষ পাখিটিকে নিয়মিত হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে এবং বীর্য সংগ্রহ করার জন্য সময় লাগবে 2 মিনিট৷
  • পুরুষ পাখি স্পর্শকাতর হয় বলে সর্বোচ্চ পরিমাণ বীর্য পাবার জন্য একই পালনকারীকে বীর্য সংগ্রহের কাজে লাগান উচিত৷
  • গড় বীর্যের পরিমাণ 0.15 থেকে 0.30মিলি হয়ে থাকে৷
  • সংগ্রহ করার এক ঘণ্টার মধ্যে বীর্য ব্যবহার করতে হবে৷
  • সপ্তাহে তিন দিন বা এক দিন অন্তর সংগ্রহের কাজ করুন৷


মাদী পাখিকে নিষিক্ত করা:
  • পাখির পাল 8-10% ডিম উত্পাদনে পৌঁছলে কৃত্রিম গর্ভাধান করা হয়৷
  • প্রতি তিন সপ্তাহে 0.025-0.030 মিলি পাতলা না করা বীর্য দিয়ে মাদী পাখিদের নিষিক্ত করুন৷
  • ঋতুর 12 সপ্তাহ পর থেকে প্রতি পনেরো দিন অন্তর নিষিক্ত করা ভাল৷
  • সন্ধ্যা 5টা-6টার পর মাদী পাখিকে নিষিক্ত করুন৷
  • একটি 16 সপ্তাহ ব্যাপী প্রজনন ঋতুতে গড় উর্বরতা 80-85% হওয়া উচিত৷

টার্কির (Turkey) খাবার দেওয়ার পদ্ধতিগুলি :
1.   মুরগীর তুলনায় টার্কির শক্তি, প্রোটিন ও খনিজের প্রয়োজন বেশি৷
2.   যেহেতু পুরুষ ও মাদীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তির(এনার্জি) পরিমাণ আলাদা, তাই ভাল ফল পাওয়ার জন্য তাদের পৃথক ভাবে পালন করতে হবে৷
3.   খাবার ফীডারে দিতে হবে, মাটিতে নয়৷
4.   যখনই এক রকম খাবার থেকে অন্য খাবারে পরিবর্তন করা হবে তা যেন আস্তে আস্তে করা হয়৷
5.   টার্কিদের সব সময় অবিরাম পরিষ্কার জলের জোগান দরকার হয়৷
6.   গ্রীষ্মকালে আরও বেশী সংখ্যায় ওয়াটারার রাখুন৷
7.   গ্রীষ্মকালে দিনের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা সময়ে টার্কিদের খাবার দিন৷
8.   পায়ের দুর্বলতা এড়াতে দিনে 30-40 গ্রা. হারে ঝিনুকের খোলার গুঁড়ো দিন ৷

সবুজ খাদ্য:
নিবিড় পদ্ধতিতে, ড্রাই ম্যাশ হিসাবে মোট খাদ্যের 50% পর্যন্ত সবুজ খাবার দেওয়া যায়৷ সব বয়সের টার্কির জন্য টাটকা লুসার্ন প্রথম শ্রেণীর সবুজ খাদ্য৷ এছাড়া খাবারের খরচ কম করার জন্য ডেসম্যান্থাস ও স্টাইলো কুচি করে টার্কিদের খাওয়ান যেতে পারে৷


টার্কিপালনের অর্থনৈতিক স্থিতিমাপ সমূহ:
পুরুষ মাদী অনুপাত
1:5
গড় ডিমের ওজন
65 গ্রা.
গড় এক দিনের বাচ্চার ওজন
50 গ্রা.
যৌন পরিপক্কতার বয়স
30 সপ্তাহ
গড় ডিমের সংখ্যা
80 -100
ইনকিউবেশন বা ডিমে তা দেওয়ার সময়সীমা
28 দিন
20 সপ্তাহে গড় ওজন
4.5 5 কিগ্রা (মাদী)
7-8
কিগ্রা (পুরুষ)
ডিম দেওয়ার সময়সীমা
24 সপ্তাহ
বাজারজাত করার উপযুক্ত বয়স
পুরুষ
মাদী

14 -15 সপ্তাহ
17
18 সপ্তাহ
বাজারজাত করার উপযুক্ত ওজন
পুরুষ
মাদী

7.5 কিগ্রা
5.5
কিগ্রা
খাদ্য কার্যকরতা
2.7 -2.8
বাজারজাত করার উপযুক্ত বয়স পর্যন্ত গড় খাবার গ্রহণ
পুরুষ
মাদী

24 -26 কিগ্রা
17
19 কিগ্রা
ব্রীডিংয়ের সময় মৃত্যুর হার
3-4%

টার্কির পরিচালন পদ্ধতিসমূহ

ইনকিউবেশন বা ডিম ফোটান :
(ক) তা দেওয়া মাদীর সাহায্যে স্বাভাবিকভাবে ডিম ফোটান:
টার্কি স্বাভাবিকভাবেই ভাল তা দেয় এবং তা-দিতে বসা মাদী 10-15 টি ডিম ফোটাতে পারে৷ 60-80% ডিম ফোটা ও সুস্থ শাবক লাভের জন্য কেবলমাত্র ভাল খোলা ও আকার এর পরিষ্কার ডিমই তা-য়ে বসাতে হবে

(খ)কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফোটান:
কৃত্রিম উপায়ে, ইনকিউবেটরের সাহায্যে ডিম ফোটান হয়৷ সেটার ও হ্যাচারের তাপমান ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা নিম্নরূপ হতে হবে:

তাপমান(ডিগ্রি ফা.)
আপেক্ষিক আর্দ্রতা(%)
সেটার 99.5
61-63
হ্যাচার 99.5
85-90

ব্রীডিং

টার্কির 0-4 সপ্তাহ বয়সকে ব্রীডিং পিরিয়ড বলা হয়৷ তবে শীতকালে ব্রীডিং পিরিয়ড বাড়িয়ে 5-6 সপ্তাহ করা হয়ে থাকে৷ সাধারণভাবে মুরগীর তুলনায় টার্কির দ্বিগুণ হোভারের জায়গা লাগে৷ এক দিন বয়সের শাবকদের ব্রুডিঙের জন্য অবলোহিত আলোর বাল্ব বা গ্যাস ব্রুডার ও চিরাচরিত ব্রীডিং ব্যবস্থা ব্যবহার করা যায়৷

  • 0-4 সপ্তাহের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার মাপ পাখী প্রতি 1.5 ব.ফু.৷
  • শাবক এসে পৌঁছোনোর অন্তত দু দিন আগে ব্রীডার হাউস তৈরী রাখতে হবে
  • মিটার ব্যাস জুড়ে গোলাকারে লিটার বিছিয়ে রাখতে হবে৷
  • শাবকরা যাতে তাপের উত্স থেকে দূরে চলে না যায় তাই অন্তত 1 ফুট উচ্চতার একটি বেড়া রাখতে হবে
  • প্রারম্ভিক তাপমাত্রা 950ফা. রাখতে হবে যা প্রতি সপ্তাহে 50 ফা. করে কমাতে হবে যতদিন না শাবকদের বয়স 4 সপ্তাহ হয়
  • অগভীর জলপাত্র ব্যবহার করতে হবে৷

লিটারের সরঞ্জাম
ব্রীডিঙের জন্য সাধারণভাবে ব্যবহৃত লিটারের সরঞ্জামগুলি হল কাঠের চোকলা, কাঠের গুঁড়ো, ধানের তুষ, কুচোন খড় ইত্যাদি৷ প্রথমে লিটার 2 ইঞ্চি পুরু করে বিছাতে হবে এবং আস্তে আস্তে তা বাড়িয়ে 3-4 ইঞ্চি পর্যন্ত করা যেতে পারে৷ দলা বেঁধে যাওয়া আটকাতে লিটার কিছুদিন পরে পরেই উলটে পালটে দিতে হবে৷

পালন পদ্ধতি
টার্কি মুক্ত ভাবে চরে বেড়ানো অথবা নিবিড় পদ্ধতিতে পালন করা চলে৷

ক৷ মুক্ত চারণ পালন পদ্ধতি
সুবিধা:
  • খাবারের খরচ পঞ্চাশ শতাংশ কম হয়৷
  • স্বল্প বিনিয়োগ৷
  • খরচের তুলনায় লাভের হার বেশী৷
মুক্ত চারণ পদ্ধতিতে, এক একর ঘেরা জমিতে আমরা 200-250টি পূর্ণ বয়স্ক টার্কি পালন করতে পারি৷ রাতে পাখী প্রতি 3-4  ব. ফু. হারে আশ্রয় জোগাতে হবে৷ চরে খাওয়ার সময় তাদের শিকারী জীবজন্তর হাত থেকে বাঁচাতে হবে৷ ছায়া ও শীতল পরিবেশ জোগানর জন্য গাছ লাগান বাঞ্ছনীয়৷ চারণভূমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে যার ফলে পরজীবী সংক্রমণের ঘটনা কম হতে সাহায্য হবে৷

মুক্ত চারণব্যবস্থায় খাওয়ান:

টার্কি খুব ভালভাবে আবর্জনা খুঁটে খায় বলে, এরা কেঁচো, ছোট পোকামাকড়, শামুক, রান্নঘরের বর্জ্য ও উইপোকা খেতে পারে, যাতে প্রচুর প্রোটিন আছে ও যা খাবারের খরচকে পঞ্চাশ শতাংশ কমিয়ে দেয়৷ এ ছাড়া শিম জাতীয় পশুখাদ্য যেমন লুসার্ন, ডেসম্যান্থাস, স্টাইলো ইত্যাদি খাওয়ান যায়৷ চরে বেড়ানো পাখীদের পায়ের দুর্বলতা ও খোঁড়া হওয়া আটকাতে খাবারে ঝিনুকের খোলা মিশিয়ে সপ্তাহে 250 গ্রাম হিসাবে ক্যালসিয়াম দিতে হবে৷ খাবারের খরচ কম করার জন্য শাকসবজির বর্জ্য অংশ দিয়ে খাবারের দশ শতাংশ পরিমাণ পূরণ করা যেতে পারে৷
স্বাস্থ্য রক্ষা:
মুক্ত চারণব্যবস্থায় পালিত টার্কির অভ্যন্তরীণ(গোল কৃমি) ও বাহ্য(ফাউল মাইট)পরজীবী সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশী৷ তাই পাখীদের ভাল বিকাশের জন্য মাসে একবার ডিওয়ার্মিং ও ডিপিং করা আবশ্যক৷

খ৷ : নিবিড় পালন পদ্ধতি

উপকারিতা:
  • উন্নত উত্পাদন দক্ষতা৷
  • উন্নততর পরিচালন  ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ৷

বাসস্থান:
  • বাসস্থান টার্কিদের রোদবৃষ্টিহাওয়াশিকারী জীবজন্তু থেকে বাঁচায়  আরাম জোগায়৷
  • দেশের অপেক্ষাকৃত গরম অঞ্চলগুলিতে ঘরগুলি লম্বালম্বি পূব থেকে পশ্চিমে রাখতে হবে৷
  • দুটি ঘরের মধ্যে অন্তত  20 মিটার দূরত্ব থাকতে হবে এবং কমবয়সী পাখীর ঘর প্রাপ্তবয়স্কদের ঘর থেকে অন্তত 50 থেকে  100 মিটার দূরে থাকতে হবে৷
  • খোলা ঘরের প্রস্থ 9 মিটারের বেশি হওয়া চলবে না৷
  • মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘরের উচ্চতা 2.6 থেকে 3.3 মিটারের মধ্যে থাকতে পারে৷
  • বৃষ্টির ছাঁট আটকাতে ঘরের চালা এক মিটার বাড়িয়ে রাখতে হবে৷
  • ঘরের মেঝে সস্তাটেঁকসই  নিরাপদ  আর্দ্রতা রোধক বস্তুযেমন কংক্রিটের হওয়া বাঞ্ছনীয়৷


ডিপ লিটার পদ্ধতিতে টার্কি পালনের সাধারণ পরিচালনা ব্যবস্থা মুরগী পালনেরই অনুরূপ, তবে বড় আকারের পাখীটির জন্য যথাযথ বসবাস, ওয়াটারার ও ফীডারের জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে৷

টার্কি ধরা ও নাড়াচাড়া করা :
সব বয়সের টার্কিদেরই খুব সহজে লাঠি দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া যায়৷ টার্কি ধরার জন্য অন্ধকার ঘরই সবথেকে ভাল, যেখানে তাদের কোনওরকম চোট না লাগিয়ে দু পা ধরে তোলা যায়৷ তবে, প্রাপ্তবয়স্ক টার্কিদের 3-4 মিনিটের বেশি সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা উচিত নয়৷

টার্কির বাসস্থান, ফীডার এবং ওয়াটারারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ:

বয়স
বাসস্থানের আয়তন
(
ব.ফু)
ফীডারের আয়তন(সেমি)
(
লিনিয়ার ফীডার)
ওয়াটারারের আয়তন(সেমি)
(
লিনিয়ার ওয়াটারার)
0-4 সপ্তাহ
1.25
2.5
1.5
5-16 সপ্তাহ
2.5
5.0
2.5
16-29 সপ্তাহ
4.0
6.5
2.5
টার্কি ব্রীডার
5.0
7.5
2.5














ডিবীকিং(ঠোঁট কাটা)
পালক খোঁটা ও পরস্পরকে ঠোকরান নিয়ন্ত্রণ করতে বাচ্চা পাখির ডিবীকিং করতে হবে৷ এক দিন বা 3-5 সপ্তাহ বয়সে ডিবীকিং করা যায়৷ নাকের ছিদ্র থেকে ঠোঁটের ডগার প্রায় অর্ধেক দূরত্বে ঠোঁট কেটে দিন৷

ডিস্নুডিং
ঠোকরান ও মারামারি থেকে মাথায় আঘাত লাগা আটকাতে স্নুড বা ডিউবিল(ঠোঁটের গোড়ায় মাংসল পিণ্ড) সরিয়ে ফেলা হয়৷ এক দিন বয়সে আঙুলের চাপ দিয়ে স্নুড তুলে ফেলা যায়৷ 3 সপ্তাহ বয়সে তা ধারাল কাঁচি দিয়ে মাথার একেবারে কাছাকাছি কেটে ফেলা যায়৷

ডিটোয়িং বা পায়ের আঙুল কাটা(ক্লিপিং) :
এক দিন বয়সে ক্লিপিং করা হয়৷ এর জন্য বাইরের দিকের টো-প্যাডের ভেতর ঘেঁষে আঙুলের ডগা ও পুরো নখটি কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়৷

খাদ্য
খাবার দেওয়ার পদ্ধতিগুলি হল ম্যাশ খাওয়ান  পেলেট(ট্যাবলেট) খাওয়ান৷
  • মুরগীর তুলনায় টার্কির শক্তিপ্রোটিন  খনিজের প্রয়োজন বেশি৷
  • যেহেতু পুরুষ  মাদীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তির(এনার্জি) পরিমাণ আলাদাতাই ভাল ফল পাওয়ার জন্য তাদের পৃথক ভাবে পালন করতে হবে৷
  • খাবার ফীডারে দিতে হবেমাটিতে নয়৷
  • যখনই এক রকম খাবার থেকে অন্য খাবারে পরিবর্তন করা হবে তা যেন আস্তে আস্তে করা হয়৷
  • টার্কিদের সব সময় অবিরাম পরিষ্কার জলের জোগান দরকার হয়৷
  • গ্রীষ্মকালে আরও বেশী সংখ্যায় ওয়াটারার রাখুন৷
  • গ্রীষ্মকালে দিনের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা সময়ে টার্কিদের খাবার দিন৷
  • পায়ের দুর্বলতা এড়াতে দিনে 30-40 গ্রা. হারে ঝিনুকের খোলার গুঁড়ো দিন 

ওজন ও খাদ্য গ্রহণ:

টার্কি খাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে, খামার ব্যাবস্তাপনার উপর ।



বয়স, সপ্তাহে
গড় ওজন(কিগ্রা)
মোট খাদ্য গ্রহণ(কিগ্রা.)


পুরুষ
মাদী
পুরুষ
মাদী
পুরুষ
মাদী
 4র্থ সপ্তাহ পর্যন্ত
0.72
0.63
0.95
0.81
1.3
1.3
 8ম সপ্তাহ পর্যন্ত
2.36
1.90
3.99
3.49
1.8
1.7
12শ সপ্তাহ পর্যন্ত
4.72
3.85
11.34
9.25
2.4
2.4
16শ সপ্তাহ পর্যন্ত
7.26
5.53
19.86
15.69
2.8
2.7
20তম সপ্তাহ পর্যন্ত
9.62
6.75
28.26
23.13
3.4
2.9

  

মাংস উৎপাদনের জন্য টার্কির সাতটি আদর্শ জাত রয়েছে। পাখিজাতীয় মাংস উৎসের মধ্যে মুরগি, হাঁস, তিতির, কোয়েলের পর টার্কি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। টার্কির মাংস অন্যান্য পাখির মাংস থেকে কম চর্বিযুক্ত, তাই অন্যান্য পাখির চেয়ে টার্কির মাংস অধিক পুষ্টিকর।পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কি অধিক জনপ্রিয়। সবচেয়ে বেশি টার্কি পালন করা হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্যসহ প্রভৃতি দেশে। আমাদের দেশের অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশে যে কোন পশু পাখি পালন অন্য দেশের তুলনায় সহজ , আবার কিছু প্রাণী আছে যারা দ্রুত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে , আর টার্কি পাখি সে রকম একটি সহনশীল জাত , যে কোন পরিবেশ দ্রুত সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।

টার্কির বাচ্চা পালন :-
টার্কির ০-৪ সপ্তাহ বয়সকে ব্রীডিং পিরিয়ড বলা হয়৷ তবে শীতকালে ব্রীডিং পিরিয়ড বাড়িয়ে ৫-৬ সপ্তাহ করা হয়ে থাকে৷ সাধারণভাবে মুরগীর তুলনায় টার্কির দ্বিগুণ হোভারের জায়গা লাগে৷ এক দিন বয়সের শাবকদের ব্রুডিঙের জন্য অবলোহিত আলোর বাল্ব বা গ্যাস ব্রুডার ও চিরাচরিত ব্রীডিং ব্যবস্থা ব্যবহার করা যায়৷

1.   ০-৪ সপ্তাহের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার মাপ পাখী প্রতি ১.৫ ব.ফু.৷
2.   শাবক এসে পৌঁছোনোর অন্তত দু দিন আগে ব্রীডার হাউস তৈরী রাখতে হবে
3.   ২ মিটার ব্যাস জুড়ে গোলাকারে লিটার বিছিয়ে রাখতে হবে৷
4.   শাবকরা যাতে তাপের উত্স থেকে দূরে চলে না যায় তাই অন্তত ১ ফুট উচ্চতার একটি বেড়া রাখতে হবে
5.   প্রারম্ভিক তাপমাত্রা ৯৫০ফা. রাখতে হবে যা প্রতি সপ্তাহে ৫০ ফা. করে কমাতে হবে যতদিন না শাবকদের বয়স ৪ সপ্তাহ হয়
6.   অগভীর জলপাত্র ব্যবহার করতে হবে৷

প্রথম চার সপ্তাহে গড় মৃত্যুহার থাকে ৬-১০% ৷ শাবকরা স্বভাবতঃই জন্মের পরে প্রথম কয়েকদিন কিছু খেতে বা পান করতে চায় না, মূলতঃ খারাপ দৃষ্টিশক্তি ও ভয় পাওয়ার কারণে৷ এইজন্য, তাদের জোর করে খাওয়াতে হয়৷

জোর করে খাওয়ান:
শাবকদের অল্প দিনের মধ্যে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ অভুক্ত থাকা ৷ তাই খাদ্য ও জল সরবরাহের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে৷ জোর করে খাওয়ানর ক্ষেত্রে প্রতি লিটার জলে ১০০ মিলি হারে দুধ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে এবং পনেরো দিন পর্যন্ত প্রতি ১০টি শাবকের জন্য একটি ডিম সিদ্ধ দিতে হবে৷ এটি শাবকদের প্রোটিন ও এনার্জির প্রয়োজন মেটাবে৷

খাবারের পাত্রটিকে আলতো করে আঙুল দিয়ে ঠুকে শাবকদের খাবারের দিকে আকৃষ্ট করা যেতে পারে৷ ফীডার এবং ওয়াটারারে রঙিন মার্বেল বা নুড়িপাথর রাখলেও শাবকেরা সেদিকে আকর্ষিত হবে৷ যেহেতু টার্কিরা সবুজ শাকপাতা ভালবাসে, তাই খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কিছু কুচোন সবুজ পাতাও খাবারে মেশাতে হবে৷ এই সঙ্গে প্রথম ২ দিন রঙীন ডিমের পাত্রকেও ফীডার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷

টার্কি পালনের সুবিধাসমুহ -
1.   মাংস উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাপক ।
2.   এটা ঝামেলাহীন ভাবে দেশী মুরগীর মত পালন করা যায় ।
3.   টার্কি ব্রয়লার মুরগীর চেয়ে দ্রুত বাড়ে ।
4.   টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ অনেক কম, কারন এরা দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাস,লতাপাতা খেতেও পছন্দ করে ।
5.   টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির শোভা বর্ধন করে ।
6.   টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশী, চর্বি কম । তাই গরু কিংবা খাসীর মাংসের বিকল্প হতে পারে ।
7.   টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, বি৬ ও ফসফরাস থাকে । এ উপাদান গুলো মানব শরীরের জন্য ভিষণ উপকারী এবং নিয়মিত এই মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায় ।
8.   টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।
9.   টার্কির মাংসে ভিটামিন ই অধিক পরিমাণে থাকে ।

টার্কি পালনের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট -
1.   ডিম দেয়া শুরুর বয়স = ৩০ সপ্তাহ ।
2.   পরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত = ১ :৫।
3.   বসরে গড় ডিম = ৮০ ১০০ টি ।
4.   ডিম ফুটে বাচ্চা বেড় হয় = ২৮ দিনে ।
5.   ২০ সপ্তাহে গড় ওজন পুরুষ পাখী = ৭ ৮ কেজি ।
6.   স্ত্রী পাখী = ৪ ৫ কেজি ।
7.   বাজারজাত করনের সঠিক সময় পুরুষ = ১৪ ১৫ সপ্তাহ ।
8.   স্ত্রী পাখী = ১৭ ১৮ সপ্তাহ ।
9.   উপযুক্ত ওজন পুরুষ পাখী = ৮ ১০ কেজি ।
10.               স্ত্রী পাখী = ৫ ৬ কেজি ।

ডিম উৎপাদন
সাধারণত ৩০ সপ্তাহ বয়স থেকে টার্কি ডিম দেয়া শুরু করে । প্রয়োজনীয় আলো বাতাস, পরিষ্কার পানি এবং খাবার সরবরাহ করা হলে বসরে ৮০ ১০০ ডিম দিয়ে থাকে । ৬০ ৭০ শতাংশ টার্কি মুরগী বিকেল বেলায় ডিম দেয় ।

মাংস উৎপাদন
টার্কি দ্রুত মাংস উৎপাদনশীল একটি পাখী । দেশী হাস মুরগীর মত সাধারন নিয়মে পালন করলেও ২৮ -৩০ সপ্তাহে প্রতিটি গড়ে ৫-৬ কেজি ওজন হয় ।

টার্কি পালন পদ্ধতি
মুক্ত অবস্থায় ও আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায় ।

লিটার ব্যাবস্থাপনা
এই পদ্ধতিতে টার্কির জন্য সহজলভ্য দ্রব্য ব্যাবহার করা যায় । যেমন নারিকেলের ছোবড়া, কাঠের গুরা, তুষ, বালি । প্রথমে ২ ইঞ্চি পুরু লিটার তৈরি করতে হয় । পরে আস্তে আস্তে আরো উপাদান যোগ করে ৩ - ৪ ইঞ্চি করলে ভালো হয় । লিটারে সব সময় শুকনো দ্রব্য ব্যাবহার করতে হবে । ভিজা লিটার তুলে সেখানে আবার শুকনো লিটার দিয়ে পূর্ণ করতে হবে ।
খাবার
টার্কির খাবার সরবরাহের জন্য দুইটি পদ্ধতি ব্যাবহার করা যায় । যেমন ম্যাশ ফিডিং ও পিলেট ফিডিং ।
একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো
ধান --------------- ২০%
গম ---------------- ২০%
ভুট্টা --------------- ২৫%
সয়াবিন মিল ------- ১০%
ঘাসের বীজ -------- ৮%
সূর্যমুখী বীজ ------- ১০%
ঝিনুক গুড়া -------- ৭%
মোট = ১০০%

সতর্কতা
অন্যান্য পাখির তুলনায় টার্কির জন্য বেশী ভিটামিন, প্রোটিন, আমিষ, মিনারেলস দিতে হয় । কোন ভাবেই মাটিতে খাবার সরবরাহ করা যাবে না । সব সময় পরিষ্কার পানি দিতে হবে ।

সবুজ খাবার
সব সময় মোট খাবারের সঙ্গে ৫০% সবুজ ঘাস খেতে দিলে ভালো । সে ক্ষেত্রে নরম জাতীয় যে কোন ঘাস হতে হবে । যেমন কলমি, হেলেঞ্চা ইত্যাদি । একটি পূর্ণ বয়স্ক টার্কির দিনে ১৪০ ১৫০ গ্রাম খাবার দরকার হয় । যেখানে ৪৪০০ ৪৫০০ ক্যালোরি নিশ্চিত করতে হবে ।

প্রজনন ব্যাবস্থা
একটি টার্কি মুরগীর জন্য ৪ ৫ বর্গ ফুট জায়গা নিশ্চিত করতে হবে । ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যাবস্থা থাকতে হবে । ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । একটি মোরগের সঙ্গে ৩ বা ৪ টি মুরগী রাখা যেতে পারে । ডিম সংগ্রহ করে আলাদা জায়গায় রখতে হবে । ডিম প্রদান কালীন সময়ে টার্কিকে আদর্শ খাবার এবং বেশী পানি দিতে হবে ।

বাচ্চা ফুটানো
টার্কি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় । তবে দেশী মুরগী অথবা ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটালে ফল ভালো পাওয়া যায় । তাছাড়া বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সময় নষ্ট না হওয়ার কারণে টার্কিও ডিম উৎপাদন বেশী করে।

রোগ বালাই
পক্স, সালমোনেলোসিস, কলেরা , মাইটস ও এভিয়ান ইনফুলেঞ্জা বেশী দেখা যায় । পরিবেশ ও খমার অব্যাবস্থাপনার কারণে অনেক রোগ সংক্রমণ হতে পারে ।
 টিকা প্রদান----
১ম দিন ---------- এন ডি ( বি১ স্টেরেইন ) ।
৪ ও ৫ সপ্তাহে ---- ফাউল পক্স ।
৬ সপ্তাহে ---------- এন ডি ।
১০ সপ্তাহে - ফাউল কলেরা ।

যেহেতু আমাদের দেশে মুরগির রানিক্ষেত রোগ হ্য়। তাই রানিক্ষেত রোগের টিকা দিয়ে নিতে পারেন।
সতর্কতাঃ-- কোন অবস্থায় রোগাক্রান্ত পাখিকে টিকা দেয়া যাবে না। টিকা প্রয়োগ করার পূর্বে টিকার গায়ে দেয়া তারিখ দেখে নিবেন। মেয়াদ উরতিন্ন টিকা প্রয়োগ করবেন না ।
এছাড়া নিয়ম মাফিক, পরিচ্ছন্ন খাদ্য ও খামার ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক রোগ বালাই এড়িয়ে চলা সম্ভব ।

 বাজার সম্ভবনা

1.   টার্কির মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় এটি খাদ্য তালিকার একটি আদর্শ মাংস হতে পারে । পাশাপাশি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে । যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু / খাসীর মাংস খায়না , টার্কি তাদের জন্য হতে পারে প্রিয় একটি বিকল্প । তাছাড়া বিয়ে, বৌ ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর/গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার । এবং গরু / খাসীর তুলনায় খরচ ও হবে কম ।
2.   বানিজ্যিক খামার করলে এবং মাংস হিসেবে উৎপাদন করতে চাইলে ১৪/১৫ সপ্তাহে একটি টার্কির গড় ওজন হবে ৫/৬ কেজি । ৪০০ টাকা কেজি দর হিসেব করলে একটি টার্কির বিক্রয় মুল্য দাঁড়াবে ২০০০/২৫০০ টাকা ১৪/১৫ সপ্তাহ পালন করতে সর্বচ্চ খরচ পরবে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা । তাহলে কম পক্ষে একটি টার্কি থেকে ৫০০ টাকা লাভ করা সম্ভব ।
3.   তবে মাংস হিসেবে বানিজ্যিক খামার গড়ে উঠতে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে । কারন তাতে বিদেশ থেকে আরো উন্নত জাত সংগ্রহ করতে হবে, অধিক বিনিয়োগ করতে হবে । কিন্তু বর্তমানে ছোট আকারের খামার করার যে চাহিদা দেশ ব্যাপী তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী ৩/৪ বসরে কয়েক লাখ টার্কির প্রয়োজন হবে । এবং সে ক্ষেত্রে দাম ও বেশী পাওয়া যাচ্ছে । ৩০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বয়স ও রং ভেদে টার্কির জোড়া কেনা বেচা চলছে ।























No comments:

Post a Comment